নয়াদিল্লি:  উরির বদলা নিল ভারত।


মধ্যরাতে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে জঙ্গি শিবির গুঁড়িয়ে দিল ভারতীয় সেনার স্পেশাল ফোর্সের জওয়ানরা। সাড়ে চার ঘণ্টার অপারেশনে খতম সাত জঙ্গি-শিবির।

এই অভিযানে নিকেশ হয়েছে ৩৮ জঙ্গি, গাইড ও হ্যান্ডলার। সূত্রের খবর, মারা গিয়েছে ২ পাক সেনাও। কোনও ভারতীয় জওয়ানের ক্ষতি হয়নি।

সেনা জানিয়েছিল, নিজেদের ঠিক করা জায়গা ও সময়ে তারা উরি সন্ত্রাসের জবাব দেবে। বৃহস্পতিবার সকালে সেনা জানিয়ে দিল, হয়েছে প্রত্যাঘাত। উরির ঠিক ১০ দিন বাদ নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে অন্তত সাতটি লঞ্চ-প্যাড (জঙ্গিদের গোপন ডেরা) গুঁড়িয়ে দিয়েছে তারা।

জানা গিয়েছে, গতকাল রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ হেলিকপ্টারে করে নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে যায় ভারতীয় সেনার স্পেশাল ফোর্স কম্যান্ডোদের ১০০ জনের একটি দল।

এরপর ২-৩ কিলোমিটার হেঁটে বাহিনী পৌঁছে যায় পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের ভিম্বর, হটস্প্রিং, কেল এবং লীপা সেক্টরে থাকা জঙ্গি-শিবিরের কাছে। প্রায় অতর্কিতভাবেই হামলা চালায় বাহিনী।

প্রায় চার ঘণ্টা ধরে অভিযান চালিয়ে ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ অভিযান শেষ করে ফিরে আসেন জওয়ানরা। তবে, তার মধ্যেই ধ্বংস হয়েছে সাত জঙ্গি শিবির। খতম হয়েছে ৩৮ জঙ্গি ও তাদের হ্যান্ডলাররা।

অন্যদিকে, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক সেরে সব ভারতীয় জওয়ান অক্ষত অবস্থায় ফিরে এসেছেন। বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ ও সেনাবাহিনীর ডিজিএমও লেফটেন্যান্ট জেনারেল রণবীর সিংহ যুগ্ম সাংবাদিক বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন।

অনুপ্রবেশ করে জঙ্গিদের একটি দল আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বলে সুনির্দিষ্ট সূত্রে খবর পাওয়ার পর ভারতীয় সেনা নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছে। বুধবার রাতে সেনা নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে জঙ্গিদের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয়।

সেনার ডিজিএমও জানিয়েছেন, এ বছর অন্তত ২০ বার নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে জঙ্গি অনুপ্রবেশ করানোর চেষ্টা করেছে পাকিস্তান। উরির পরেও সেই চেষ্টা থামেনি।

এমনকী বুধবারও অনুপ্রবেশের জন্য নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে জড়ো হয়েছিল জঙ্গিরা। ডিজিএমও জানান, কাশ্মীর সীমান্তে জঙ্গিদের একটি দল আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যায়।

এরপরই গভীর রাতে নিয়ন্ত্রণরেখা টপকে ওপারে গিয়ে ভারতীয় সেনা সার্জিক্যাল স্ট্রাইককরে। ভারতীয় সেনা জানিয়েছে, নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করা হয়েছে। গোয়েন্দাদের কাছে নির্দিষ্ট তথ্য এসেছিল। তারপরই এই অভিযানে সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় সূত্রের খবর, অভিযানের আগে গতকাল ৩ বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এরপর ৩ বাহিনীর সঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকরের বৈঠক হয়। এমনকী, এর জন্য মঙ্গলবার ওয়াররুমে যান প্রধানমন্ত্রী।

এরপর সকালে ফোন করে পাক সেনার ডিজিএমও-কে এই অপারেশনের খবর জানিয়েছেন রণবীর সিংহ নিজেই, বলেছেন, ভারত এরপরেও আশা করে, পাক সেনা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের সহযোগিতা করবে। অর্থাৎ ভারতীয় প্রত্যাঘাতের কথা পাক পক্ষের কাছেই সম্ভবত ছিল না।

এই মুহূর্তে আর নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে অপারেশনের কথা ভাবছে না তারা। তবে বুধবারের অপারেশনের প্রেক্ষিতে প্রয়োজন অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা নেবে।

সেনা জানিয়েছে, ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে, এমন কোনও ঘটনা ঘটলে ভারত একইভাবে উত্তর দেবে। ভবিষ্যতে নিয়ন্ত্ররেখা বরাবর কোনওরকম জঙ্গি কার্যকলাপ বরদাস্ত করা হবে না। হামলা হলে পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুত ভারত, হুঁশিয়ারি ডিজিএমও-র।

এদিকে, গতকালের সার্জিক্যাল হামলার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফোনে জানান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, উপ রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে। জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করার কথা জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিকেও জানানো হয়।

আজ বিকেল চারটে নাগাদ এনিয়ে সর্বদল বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে কংগ্রেস। পাশাপাশি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে ফোনে সার্জিক্যাল হামলার কথা জানানো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্জাব এবং ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীকে। এছাড়া গুলাম নবি আজাদ এবং সীতারাম ইয়েচুরিকেও সার্জিক্যাল আক্রমণের কথা জানানো হয়।

ওদিকে, পাক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এই অপারেশনের তীব্র নিন্দা করেছেন। তাঁর হুঁশিয়ারি, পাকিস্তানের শান্তির প্রচেষ্টাযেন তাদের দুর্বলতা হিসেবে না দেখা হয়।