নয়াদিল্লি: সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরও সীমান্তপার নাশকতা বন্ধের কোনও প্রচেষ্টা নেই পাকিস্তান প্রশাসনের তরফে। সূত্রের খবর, এখনও নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে এখনও ৪৮ জঙ্গি লঞ্চ-প্যাড ও ১৫ জঙ্গি-শিবির সক্রিয় ও চালু রয়েছে।


সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, ওই ৪৮ লঞ্চ-প্যাডগুলি নিয়ন্ত্রণরেখার একেবারে খুব কাছে অবস্থিত। ভারতে অনুপ্রবেশ করার জন্য সেখানে অপেক্ষা করছে প্রায় ৩৫০ জঙ্গি। এর মধ্যে প্রায় ১৫০ জঙ্গি সেনার ১৬ কোরের (নাগরোটা, জম্মু) কার্যক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে।


প্রসঙ্গত, গত সোমবার, এই কোরের নজরদারিতে থাকা পুঞ্চের কৃষ্ণঘাঁটিতে হামলা চালায় পাক সেনা। ভারতীয় সেনা ছাউনি লক্ষ্য করে মর্টার ও রকেট দিয়ে প্রথমে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করা হয়। তারপর ২ ভারতীয় জওয়ানের মুণ্ডচ্ছেদ করে পালিয়ে যায় পাক সেনার স্পেশাল বর্ডার অ্যাকশন টিম বা ব্যাট।


সেনা সূত্রের খবর, এছাড়া সেনার ১৫ কোরের এলাকাতে (শ্রীনগর) অনুপ্রবেশ করার জন্য নিয়ন্ত্রণরেখার উল্টোদিকে অপেক্ষা করছে প্রায় ২০০ জঙ্গি। বর্তমানে গোটা অঞ্চল তুষারাবৃত। যার জেরে ভারতে অনুপ্রবেশ করতে পারছে না জঙ্গিরা। তারা অপেক্ষা করছে বরফ গলার।


সেনা সূত্রে খবর, জঙ্গি লঞ্চ-প্যাডগুলি কৃষ্ণঘাঁটি সেক্টরের ঠিক উল্টোদিকে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের হট স্প্রিং, বুট্টল ও রোজা এলাকায় রয়েছে। এছাড়া, ১৬ কোরের নৌশেরা এবং অন্য এলাকার উল্টোদিকে নিকায়াল, ভিম্বরগলি, সেবকোট ও সমানী এলাকায় বহু জঙ্গি লঞ্চপ্যাড সক্রিয় রয়েছে। শুধু তাই নয়, আখনুরের উল্টোদিকে বরনালা এবং পর্ধা অঞ্চলেও জঙ্গিরা ভারতে অনুপ্রবেশ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।


সেনা সূত্রের খবর, জঙ্গি লঞ্চপ্যাডগুলি সীমান্তের দু থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে। গত বছর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে ভারতীয় সেনার স্পেশাল ফোর্সের কম্যান্ডোরা এধরনের পাঁচটি এলাকায় ঢুকে সাতটি লঞ্চপ্যাড ধ্বংস করেছিলেন।


এছাড়া, মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স-এর সূত্র জানাচ্ছে, পাকিস্তানে এই মুহূর্তে প্রায় ৩০ জঙ্গি শিবির সক্রিয় রয়েছে। সেখানে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সূত্রের খবর, এই প্রশিক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে পাক গুপ্ততর সংস্থা আইএসআই।


সেনা সূত্রের খবর, এর মধ্যে ১৫টি শিবির ‘অতি-সক্রিয়’ রয়েছে। যার মধ্যে আবার ১০টি রয়েছে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে এবং বাকি পাঁচটি পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায়। ভারতের মাল্টি-এজেন্সি সেন্টার বা ম্যাক-এর দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে—এই ১৫টি জঙ্গি শিবিরের মধ্যে ৫টি পীরপঞ্জল রেঞ্জের উত্তরে এবং ৫টি পীরপঞ্জলের দক্ষিণে অবস্থিত। উল্লেখ্য, কৃষ্ণঘাঁটি এই পীরপঞ্জল রেঞ্জের দক্ষিণে রয়েছে।


জানা গিয়েছে, অধিকাংশ জঙ্গি-শিবির নিয়ন্ত্রণরেখার ২০-২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এর মধ্যে সবথেকে বড় শিবির হল পাকিস্তানের মুরীদকেতে অবস্থিত লস্কর-ই-তৈবার শিবির। এছাড়া ভাওয়লপুরে রয়েছে জয়েশ-ই-মহম্মদের শিবির এবং মুজফ্ফরাবাদে রয়েছে হিজবুল মুজাহিদিনের শিবির। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, এই প্রত্যেকটি শিবিরই ভারতীয় সেনার স্ট্রাইক রেঞ্জে রয়েছে।


চলতি বছরের প্রথম ৪ মাসে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ৬০টি অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছে জঙ্গিরা। এর মধ্যে ১৫ বার জঙ্গিরা ভারতে ঢুকতে পেরেছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে। ৮ জঙ্গি মারা গিয়েছে।