ইসলামাবাদ: ভারতীয় সেনার গোলায় রবিবার তাদের অন্তত সাত জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে বলে সোমবার দাবি করল পাকিস্তান সেনা। সাধারণত, ভারতীয় সেনার গুলিতে তাদের সামরিক ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করে না পাকিস্তান। সেই দিক দিয়ে এটি বিরল স্বীকারোক্তি বটে! এদিন এক বিবৃতি পেশ করে পাক সেনার তরফে জানানো হয়েছে, রবিবার রাতে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর জম্মুর ভিম্বর সেক্টরে ভারতীয় সেনা ‘বিনা প্ররোচনায়’ হামলা চালায়। ভারতীয় সেনার গোলায় নিহত হয়েছে তাদের সাত জওয়ান। ভারতীয় ‘হামলার’ প্রত্যুত্তর দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেছে পাক ফৌজ।


নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে ৭ পাকিস্তানি সেনা জওয়ানের মৃত্যুর পাল্টা যুত্সই জবাব দিতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন সেনা প্রধান জেনারেল রাহিল শরিফ। পাক সেনার মুখপাত্র জানান, নিহত জওয়ানদের অন্ত্যোষ্ঠিতে যোগ দিতে এদিন রাওয়ালপিন্ডির কাছে ঝিলামে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁকে নিয়ন্ত্রণ রেখার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানান পাক সেনা কমান্ডাররা। তিনি জানান, সেনাবাহিনী যথাযোগ্য জবাব দিতে থাকবে। মাতৃভূমি রক্ষায় কোনও প্রয়াসই বাকি না রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, পাকিস্তান ভারতীয় গুলিগোলার যোগ্য জবাব দিয়েছে, নিশ্চিত ভাবেই ভারতীয় জওয়ানদের খতম করেছে তারা। নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারত নিজের ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করছে বলেও দাবি করেন আসিফ।

এই ঘটনার প্রতিবাদে ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার গৌতম বাম্বাওয়ালেকে তলব করেছে পাক প্রশাসন। এর আগে, পাক বিদেশমন্ত্রকের তরফে দাবি করা হয়েছিল যে, গত কয়েক সপ্তাহে ভারতীয় সেনার গোলাগুলিতে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের অন্তত ২৫ জন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফও পাল্টা হুঙ্কার ছেড়ে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা ‘যে কোনও আগ্রাসনে’র মুখে নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষায় ‘পুরোপুরি সক্ষম’।  পাকিস্তানের প্রেস ইনফরমেশমন দপ্তর বলেছে, নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতীয় বাহিনীর সর্বশেষ সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনে প্রাণহানির ঘটনায়  শোক জানিয়ে তিনি বলেছেন, গত কয়েকদিন ধরে ভারতীয় বাহিনী লাগাতার যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙেই চলেছে, এটা খুবই দুঃখজনক। বরাবরের অভ্যাসমতো শরিফ এও বলেছেন যে,  কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর 'ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন' থেকে আন্তর্জাতিক মহলের নজর ঘোরাতেই এই হামলা।

এদিকে, ভারতীয় সেনা সূত্রে গোলাগুলির বিষয়টি স্বীকার করা হলেও, পাক তত্ত্বকে খারিজ করা হয়েছে। ভারতের পাল্টা দাবি, পাকিস্তানই প্রথমে হামলা শুরু করেছিল। যার জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনা।


প্রসঙ্গত, গত ২৯ সেপ্টেম্বর পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে ভারতীয় ফৌজ। এরপর থেকেই লাগাতার নিয়ন্ত্রণরেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্তে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করেছে পাকিস্তান।


এপর্যন্ত, শতাধিক বার তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে ভারতীয় সেনা ছাউনি ও সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করে বিনা প্ররোচনায় গোলাগুলি চালিয়েছে। যাতে অন্তত সেনা ও আধা-সামরিক বাহিনীর ১৩ জন জওয়ান শহিদ হয়েছেন। একইসঙ্গে বহু নিরীহ মানুষের প্রাণও গিয়েছে। সময়ে সময়ে এর জবাবও দিয়েছে ভারতীয় সেনা।