নয়াদিল্লি: নোট বাতিল কাণ্ডে বারবার সংসদ অচল হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রবীণ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী। অচলাবস্থার জন্য সরকার ও বিরোধী—উভয়পক্ষকেই দায়ী করলেন তিনি। তাঁর আক্রমণের হাত থেকে রেহাই পাননি খোদ স্পিকারও।
এদিন কংগ্রেস ও তৃণমূলের হই-হট্টগোলের মধ্যেই মধ্যাহ্নভোজনের আগে লোকসভা মুলতুবি হয়ে যায় লোকসভা। ঠিক তার আগে নিজের ক্ষোভ উগরে দেন আডবাণী। চোখের সামনে এই পরিস্থিতি দেখে স্পিকার এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন প্রবীণ বিজেপি সাংসদ।
হৈ হট্টগোলের চোটে লোকসভা যখন কার্যত স্তব্ধ, তখনই সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অনন্ত কুমারকে ডেকে তিনি বলেন, কে লোকসভা পরিচালনা করছে? না স্পিকার, না সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী। সব নিজের মতো চলছে।
আডবাণী জানান, তিনি স্পিকারকে বলবেন যে তিনি (স্পিকার) ঠিকভাবে সভা পরিচালন করছেন না। বলেন, আমি প্রকাশ্যেই বলব যে কোনও পক্ষই সভাকে চলতে দিচ্ছে না।
এদিকে, আডবাণীর এই মন্তব্যের পরই সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে দোষারোপ-পাল্টা দোষারোপের পালা শুরু হয়ে যায়। কংগ্রেসের কটাক্ষ, আডবাণীর মতো প্রবীণ নেতার কথাকে মান্যতা দেওয়া উচিত সরকারের।
অন্যদিকে, বিরোধীদের কোর্টে বল ঠেলে দেয় শাসক শিবিরও। সংসদ-বিষয়ক মন্ত্রী অনন্ত কুমার বলেন, উনি (আডবাণী) বিরোধীদের আচরণে ক্ষুব্ধ। বেঙ্কাইয়া নাইডু বলেন, সকলেই দুঃখিত। কিন্তু, এটাও সত্যি যে, বিরোধীরা সভাকে ভণ্ডুল করছে।
এদিকে, নোট বাতিল নিয়ে বুধবারও দিনভর উত্তাল রইল সংসদ। শাসক-বিরোধী তুমুল তরজায় বারবার থমকে গেল দুই কক্ষের অধিবেশন।
লোকসভায় এদিন নোট বাতিল ইস্যুতে বিরোধিতায় অগ্রণী ভূমিকা নেয় তৃণমূল। অধিবেশনের শুরু থেকেই স্লোগান দিতে শুরু করেন তৃণমূল সাংসদরা। একদফা স্থগিত হওয়ার পর দুপুর দু’টোয় ফের শুরু হয় অধিবেশন।
কিন্তু, তখন ভোটাভুটি ছাড়াই আলোচনা শুরু করে দেয় সরকার। এতে ফের ক্ষোভে ফেটে পড়েন তৃণমূল সাংসদরা। টিআরএস সাংসদ জিতেন্দর রেড্ডির বক্তব্যের মাঝেই ফের তাঁরা স্লোগান দিতে শুরু করেন।
তৃণমূলের রণংদেহী ভূমিকা নিয়ে বিজেপি অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় বলেন, আমরা আলোচনা চাইছি। বিরোধীরা চাইছে না। আলোচনা হলে প্রমাণ হবে সরকার ঠিক করছে।
অন্যদিকে, রাজ্যসভায় এদিন নোট বাতিল প্রসঙ্গ তোলেন বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ। বলেন, ৮৪ জন মারা গেছে। এর জন্য দায়ী কে? কংগ্রেসের সঙ্গে সুর মিলিয়ে মোদী সরকারকে আক্রমণ করেন বহুজন সমাজ পার্টির সাংসদ মায়াবতীও।
বিরোধীদের পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। অরুণ জেটলি বলেন, আমরা আলোচনা করতে রাজি। আপনারা চলতে দিচ্ছেন না। হিম্মত থাকলে আলোচনায় শুরু করুন।
সূত্রের খবর, এদিন অধিবেশন শুরুর আগে সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সাংসদদের ফের বুঝিয়ে দেন, তিনি নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে অনড়। সাংসদদের তিনি নির্দেশ দেন, এই সিদ্ধান্তের সুফল আরও ভাল করে মানুষকে বোঝাতে।