নয়াদিল্লি: টিপু সুলতান বিতর্ক এবার নয়াদিল্লিতে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল দিল্লি বিধানসভার গ্যালারিতে সাধারণতন্ত্র দিবসে স্বাধীনতা সংগ্রামী, দেশপ্রেমিক বিপ্লবী সহ ৬৯ জন নামী ব্যক্তিত্বের ছবি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এঁদের মধ্যে আছেন মহীশূরের অষ্টাদশ শতকের শাসক টিপুও। গত দু বছর ধরে কর্নাটকের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকার ধুমধাম করে টিপুর জন্মবার্ষিকী পালন করছে, যার বিরোধিতায় সরব বিজেপি। টিপুর ছবি কেজরীবাল গ্যালারিতে উন্মোচন করায় প্রবল অসন্তোষ জানিয়েছে তারা। বিজেপি নেতাদের দাবি, টিপু ছিলেন কট্টর হিন্দু-বিরোধী ও গণ হত্যাকারী।
দিল্লি বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক ওম প্রকাশ শর্মার দাবি, এহেন বিতর্কিত চরিত্রের ছবির প্রদর্শন থেকে বিরত থাকা উচিত। তবে কংগ্রেসের অভিমত, টিপু স্বাধীনতা যোদ্ধা ছিলেন, ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। তাই দেশের মহান শাসকদের মধ্যেই তাঁকে ধরতে হবে।
২০১৫ থেকে কর্নাটকে টিপুর জন্মবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে। তবে এর বিরুদ্ধে হিংসাত্মক বিক্ষোভ হয়। বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত কোদাগুতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘিরে অশান্তির জেরে মৃত্যু হয় দুজনের।
দিল্লি বিধানসভার স্পিকার রাম নিবাস গোয়েল অবশ্য বিজেপির বিরোধিতাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। বিজেপি নেতারা 'সবসময়ই যে কোনও ইস্যুতে একটা না একটা ছুতোয় বিতর্ক তৈরি করেন' বলে কটাক্ষ করেন তিনি। বিজেপির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ভারতের সংবিধানের ১৪৪ পৃষ্ঠায়ও টিপু সুলতানের একটি ছবি আছে। সুতরাং হয়, যারা দেশ স্বাধীন করতে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন, সংবিধান রচনা করেছিলেন, তাঁরা, নয়তো ওরা (বিজেপি) 'গদ্দার'! বিজেপি সস্তা রাজনীতি বন্ধ করে উন্নয়নে সামিল হোক।
দিল্লি বিধানসভার গ্যালারিতে রাখা হয়েছে সুভাষ চন্দ্র বসু, ভগত্ সিংহ, বিরসা মুন্ডা, আসফাকুল্লা খানের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীর ছবি।
কেজরীবাল দেশে 'হিংসার আবহ' তৈরি করা হচ্ছে, মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছে না বলে মন্তব্য করে গতকালের ভাষণে বলেন, স্বাধীনতা অর্জন করা কঠিন ছিল বটে, তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মনে হয়, সেই স্বাধীনতা রক্ষা করা আরও বেশি কঠিন।
তিনি বলেন, উন্নততর শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে আরও আরও স্কুল, হাসপাতাল তৈরি করা, গরিব ও ধনীর বৈষম্য দূর করা, পরিকাঠামো তৈরি করাই প্রকৃত দেশপ্রেম। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে চাষী, শ্রমিক, বণিক মহল অখুশি বলেও অভিমত জানান তিনি। বলেন, ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। কোনও দেশই শান্তি না থাকলে এগোতে পারে না। শান্তি, সম্প্রীতি রক্ষা যে কোনও সরকারের প্রথম কাজ। বিভেদকামী শক্তিগুলি দেশের ক্ষতি করছে।