কোঝিকোড়: কেরলে বিমান দুর্ঘটনার পর শেষ হয়েছে উদ্ধার অভিযান। দুই পাইলট সহ ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। উদ্ধার করা হয়েছে ১৭০ জনকে। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান (আইএক্স-১৩৪৪)-এ ছিলেন ১৯০ জন যাত্রী। যাত্রীদের মধ্যে ১৭৪ জন বয়স্ক, ১০ জন শিশু, ৪ জন কেবিন ক্রু ও দুইজন পাইলট।
আহতদের মল্লপুরম ও কোঝিকোড়ের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃষ্টির কারণে কোঝিকোড় বিমানবন্দরের রানওয়েতে পিছলে গিয়ে বিমানটি ৩৫ ফুট নিচে পড়ে গিয়ে দুই টুকরো হয়ে যায়। শুক্রবার সন্ধে ৭.৪১ চায় এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে।


দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলের ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা উঠে এসেছে প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়। দুর্ঘটনার পরই যাত্রীদের আর্ত চিত্কার, অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের আওয়াজে এলাকা ভারী হয়ে ওঠে। বিমান খাদে পড়ে যাওয়ার পর চতুর্দিকে তখন যাত্রীদের আর্ত চিত্কার, রক্তে ভেজা জামাকাপড়, ভয়ার্ত শিশুদের কান্না, অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দ পুরো এলাকার পরিবেশ ভারাক্রান্ত করে তোলে। বৃষ্টির মধ্যেই পুলিশ ও উদ্ধার কর্মীদের সঙ্গে যাত্রীদের উদ্ধারের কাজে হাত মেলান স্থানীয়রাও। তাঁরা আহত পুরুষ, মহিলা যাত্রীদের দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমান থেকে বের করে আনার কাজ শুরু করেন। প্রচণ্ড শব্দে বিমানটি দুই টুকরো হয়ে যায়। যাত্রীরা তখন বুঝে উঠতে পারেননি, মুহুর্তের মধ্যেই কী হয়ে গেল।
উদ্ধার কর্মীরা যাত্রীদের বাইরে বের করে আনেন। এরইমধ্যে চার-পাঁচ বছরের ছোট্ট এক শিশুকে উদ্ধার কর্মীর কোলে আঁকড়ে ধরে থাকতে দেখা যায়। যাত্রীদের জিনিসপত্র তখন এখানে-ওখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। প্রচণ্ড আওয়াজ শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্থানীয়রা।
উদ্ধার অভিযানে সামিল এক ব্যক্তি টেলিভিশন চ্যানেলকে জানান, আহত পাইলটদের ককপিট ভেঙে বের করা হয়। অন্য এক স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছেন, প্রচণ্ড আওয়াজ শুনে তিনি বিমানবন্দরে ছুটে আসেন। ছোট ছোট শিশু আসনে আটকে পড়েছিল, যে দৃশ্য খুবই মর্মান্তিক। অনেক যাত্রীরই আঘাত লাগে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা ছিল খুবই গুরুতর। কারুর কারুর পা ভেঙে গিয়েছে..আমার হাত ও জামাকাপড় আহতদের রক্তে ভিজে যায়।
কেরলের এই বিমান দুর্ঘটনার পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এরমধ্যে বিপজ্জনক রানওয়ে একটা কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। সাধারণত রানওয়ের মাঝ লাইট থাকে, যাকে সেন্টার লাইট বলা হয়। এতে রাতে বিমান অবতরণের সময় আন্দাজ থাকে। কিন্তু এই রানওয়েতে সেন্টার লাইট ছিল না। এই রানওয়েতে বড় বিমান অবতরণ করে না, কারণ তা বিপজ্জনক।
খারাপ আবহাওয়ার কারণে দৃশ্যমানতা কম থাকে, যেখানে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। বৃহস্পতিবার থেকে কোঝিকোড়ে ভারী বৃষ্টি হচ্ছিল। আবহাওয়া ছিল খারাপ। এই কারণেই এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস সঠিকভাবে অবতরণ করতে পারেনি বলে অনুমান। আর এই কারণেই তা পিছলে খাদে গিয়ে পড়ে।
এই দুর্ঘটনার পর ভারতের মহাবাণিজ্যিক দূতাবাস হেল্পলাইন নম্বর 056 546 3903, 054 309 0572, ও 054 309 0575 চালু করে।