রায়পুর, কলকাতা: অবশেষে কলকাতায় এসে পৌঁছল আকাঙ্খা হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত উদয়ন দাস। রায়পুর থেকে বিমানে উদয়নকে আনা হয় কলকাতায়।  সড়কপথে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বাঁকুড়া। আগামীকাল বাঁকুড়া আদালতে তোলা হবে।


এদিকে আকাঙ্খাকাণ্ডে হাতে এল আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রসঙ্গত, আকাঙ্খার বয়ান হিসেবে একটি চিঠি থানায় জমা দেয় উদয়ন। ভোপালের সাকেতনগর থানায় জমা দেওয়া ওই চিঠিতে আকাঙ্খার বয়ানে লেখা ছিল, আমি নিজের ইচ্ছায় উদয়নকে বিয়ে করেছি। বাবা এসে বারবার বিরক্ত করছে। তদন্তে জানা গিয়েছে গত বছর ডিসেম্বরে ভোপালে যায় আকাঙ্খার বাবা-ভাই, বাড়িতে সাড়া না মেলায় স্থানীয় থানায় যান তাঁরা। সেখানেও ভোপালের স্থানীয় থানার বিরুদ্ধে সাহায্য না করার অভিযোগ উঠেছিল।  আপাতত সব জল্পনার রহস্যভেদ করে আকাঙ্খার পরিবার জানতে পেরেছে, তাঁদের মেয়ে আর বেঁচে নেই।



এদিকে একের পর এক মিথ্যার জাল বুনতে কোনও জুড়ি ছিল না আকাঙ্খা হত্যায় মূল অভিযুক্ত উদয়ন দাসের। মিথ্যার জাল বুনতে হাতিয়ার করেছিল ফেসবুককে।বাবার নামে খোলা ফেসবুক অ্যাকাউন্টে উদয়ন দিয়েছিল মার্সিডিজ, ল্যাম্বর্ঘিনিতে চড়ার ছবি। দেখাতে চেয়েছিল যে সে কতটা অবস্থাপন্ন পরিবারের সন্তান, অনুমান তদন্তকারীদের।

তদন্তকারীদের অনুমান, নিজেকে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান হিসেবে চেনাতেই উদয়নের ফেসবুকে এই মিথ্যার জাল বোনে। ল্যাম্বর্ঘিনির ছবি দিয়ে ওয়ালে একটি পোস্টও করে ওই যুবক। তাতে লেখা ছিল, সমস্ত পরমাণু শক্তিধর দেশ শক্তি বৃদ্ধি করতে চায়। তাই শক্তি বাড়াতেই ল্যাম্বর্ঘিনি চড়ছি। আমি প্রচণ্ড ধনী বলেই এই গাড়িতে চড়তে পারছি। কারও ক্ষমতা নেই আমাকে ঠেকায়।



এছাড়াও, ফেসবুকে নিজের ও আকাঙ্খার ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি পোস্ট করে উদয়ন। প্রেমিকার সঙ্গে তার সম্পর্ক কতটা গভীর, তা বোঝাতেই এই ছক বলে পুলিশের অনুমান।

এছাড়া ধৃত উদয়ন দাস বাবা-মাকে খুনের পর দেহ বাড়িতেই রেখে দেয় বলে তদন্তে জানা গিয়েছে, দাবি পুলিশের। বাবা-মাকে হত্যার পর উদয়ন প্রথমে বাড়িতে ডেকে আনে কয়েকজন শ্রমিককে। সেপটিক ট্যাঙ্ক তৈরির জন্য তাদের বাগানের মাটি খুঁড়তে বলে সে। প্রায় সাড়ে ৭ ফুট গভীর গর্ত খোঁড়া হয়। এরপর তার মধ্যেই বাবা-মার দেহ পুঁতে দেয় উদয়ন।

তদন্তকারীরা মনে করছেন, পরিকল্পিতভাবেই খুন করেছে ওই যুবক। তার কাজকর্মে যারাই বাধা দিয়েছে, পথের কাঁটা ভেবে তাদেরকেই সরিয়ে দিয়েছে উদয়ন। পাশাপাশি, তদন্তকারীরা মনে করছেন, সম্ভবত আকাঙ্খাকে আমেরিকায় যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন বলে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন উদয়ন। সেই স্বপ্নভঙ্গ হওয়াতেই বিবাদের সূত্রপাত বলে মনে করছে পুলিশ।

এদিকে ভোপালে প্রেমিকা আকাঙ্খা শর্মা খুনের ঘটনায় ধৃত উদয়ন দাসের আজ রাজ্যে ফেরা নিয়ে সংশয়। অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের অনুমোদন না মেলায় দেখা দিয়েছে সমস্যা। উড়ান সংস্থার বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ রাজ্য পুলিশের। রায়পুর থেকে উদয়নকে নিয়ে সকাল সাড়ে ৯টায় ইন্ডিগোর কলকাতাগামী বিমান ধরার কথা ছিল বাঁকুড়া পুলিশের। অভিযুক্তকে বিমানে আনার জন্য অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। সেই অনুমোদন না থাকায় বিমানবন্দরে আপত্তি জানায় ইন্ডিগো সংস্থা। এরপরই দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। পুলিশ সূত্রে খবর, কলকাতায় আনার পরে সড়কপথে উদয়নকে নিয়ে যাওয়া হবে বাঁকুড়ায়। সেখানেই পেশ করা হবে আদালতে। পরে তাকে হেফাজতে নেবে রায়পুর পুলিশ।