লখনউ: বিধানসভা ভোটের আর ছ’মাসও বোধহয় বাকি নেই। এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশের বিখ্যাত যাদব পরিবারে অশান্তি। কাকা শিবপালকে ‘সবক’ শেখাতে ভাইপো অখিলেশ কেড়ে নিয়েছেন তাঁর হাতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ তিন তিনটি দফতর। ক্রুদ্ধ শিবপাল দিল্লি গিয়ে দেখা করেছেন দাদা মুলায়মের সঙ্গে, সটান জানিয়েছেন, তাঁর পক্ষে অখিলেশের সঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়। বিপাকে পড়া এসপি সুপ্রিমো ছেলেকে বশে আনতে কেড়ে নিয়েছেন তাঁর দলীয় সভাপতি পদ, সেখানে বসিয়েছেন ক্ষুব্ধ ভাই শিবপালকে। জবাবে অখিলেশ নরম তো হনইনি, উল্টে বাবা, কাকা দুজনের সঙ্গেই নাকি বাক্যালাপ বন্ধ করে দিয়েছেন। আর এর মধ্যেই শুক্রবার সমস্যা মেটাতে বৈঠকে বসছে সমাজবাদী পার্টির সংসদীয় বোর্ড।

সমস্যার সূত্রপাত ১২ তারিখ, ভোটের আগে ভাবমূর্তি উদ্ধারের লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত করেন খননমন্ত্রী গায়ত্রী প্রজাপতি ও পঞ্চায়েতরাজ মন্ত্রী রাজকিশোর সিংহকে। প্রশাসনকে পুরোপুরি কবজা করার লক্ষ্যে দীপক সিঙ্ঘল নামে এক ক্ষমতাশালী কূটনীতিককেও মুখ্যসচিবের পদ থেকে সরিয়ে দেন তিনি। এই দীপক সিঙ্ঘল সমাজবাদী পার্টিতে রীতিমত ক্ষমতাশালী মুলায়ম ভ্রাতা শিবপালের ঘনিষ্ঠ। এখানেই থেমে না থেকে অখিলেশ শিবপালের হাত থেকে তিন তিনটি দফতর কেড়ে নেন, যেগুলির মধ্যে ছিল পূর্ত, রাজস্ব ও সমবায়ের মত গুরুত্বপূর্ণ দফতর, বদলে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয় অপেক্ষাকৃত হালকা সমাজকল্যাণ দফতরে। পূর্তর মত গুরুত্বপূর্ণ দফতর নিয়ে আসা হয় মুখ্যমন্ত্রীর আওতায়।

এখন এসপি-র মধ্যে শিবপালের প্রভাব মুলায়মের পরেই। বিধায়কদের মধ্যে তাঁর রীতিমত জনপ্রিয়তা রয়েছে, তিনি যদি প্রতিশোধস্পৃহায় বিধানসভা ভোটে গোঁজ প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দেন, তাহলে বিখ্যাত যাদব পিতা-পুত্রের ভোটে হার কার্যত নিশ্চিত। ভাইকে ঠান্ডা করতে আসরে নামেন খোদ মুলায়ম। দীর্ঘ ৫ ঘণ্টার বৈঠকেও শিবপাল সন্তুষ্ট না হওয়ায় রাজ্য সভাপতি পদ থেকে অখিলেশকে হঠিয়ে দেন তিনি। সেখানে নিয়ে আসেন শিবপালকে।

কিন্তু প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ অখিলেশ এরপরও বোঝাপড়ায় আসার কোনও লক্ষণ দেখাননি। অপসারিত আমলা, মন্ত্রীদের পুনর্বহাল তো দূরের কথা, দিল্লি গিয়ে বাবার সঙ্গে আলোচনায় বসারও ইচ্ছেপ্রকাশ করেননি তিনি। উল্টে জানা গেছে, বাবা, কাকার সঙ্গে বাক্যালাপ বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাঁর। তবে ঝামেলার জন্য অখিলেশ প্রকারান্তরে দুষছেন আবার এসপি-তে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা অমর সিংহকে। নাম না করে মন্তব্য করেছেন, ‘বাইরের লোক’-দের দলের ব্যাপারে নাক গলাতে দেওয়া উচিত নয়। যদিও অমর সিংহ এই অভিযোগে কান দেওয়ার লক্ষণ দেখাননি। বরং তাঁর দাবি, অখিলেশ তাঁকে লক্ষ্য করে কিছু বলেননি, অখিলেশের সঙ্গে বাবা-কাকার এই ঝগড়ায় তাঁর কোনও হাত নেই। এর মধ্যে শুক্রবার লখনউয়ে বৈঠকে বসছে এসপি সংসদীয় বোর্ড। মনে করা হচ্ছে, সেখানে এই পারিবারিক নাটক ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছতে পারে।