হায়দরাবাদ: এক বছরও হয়নি, ধুমধাম করে দত্তক নিয়েছেন। চাহিদামত নার্সিং কোর্সে ভর্তি করেছেন, হস্টেলও ঠিক করে দিয়েছেন। এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও আবিষ্কার করেছেন, তাঁর দত্তক মেয়ের পড়াশোনার মোটেই ইচ্ছে নেই। উল্টে বিয়ে করতে চায় সে। পাত্রটি কাজ করে হস্টেলের সামনের সাইকেলের দোকানে। রোজগার অতি সামান্য। কিন্তু বিয়ের সিদ্ধান্তে নাছোড় কেসিআর কন্যা জানিয়ে দিয়েছে, বিয়ে করলে ওই ছেলেকেই, নয়তো নয়।

দত্তক ওই কন্যার নাম সি প্রত্যুষা। মেয়েটিকে তেলেঙ্গানার এলবি নগর এলাকা থেকে গত বছর উদ্ধার করে পুলিশ। বাবা আর সৎমার সংসারে অত্যাচারিত প্রত্যুষার মার খেয়ে খেয়ে সারা গায়ে ঘা হয়ে গিয়েছিল। জানতে পেরে এগিয়ে আসেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। দত্তক নিয়ে মেয়েটিকে কন্যার মর্যাদা দেন। প্রত্যুষা চেয়েছিল নার্স হতে, তাকে নার্সিং কোর্সে ভর্তি করে দেন। মুখ্যমন্ত্রীর মেয়ে বলে কথা, হস্টেলে রুমও মিলে যায় অনায়াসে। শুধু তাই নয়, অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্ট সুয়ো মোটো করে জানিয়ে দেয়, প্রত্যুষার খেয়াল রাখবে তারা। তার সরকারি অভিভাবক হিসেবে নিযুক্ত করা হয় খোদ

জেলা কালেক্টরকে, সবরকম সুবিধে অসুবিধের দিকে লক্ষ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয় যেখানে প্রত্যুষার হস্টেল সেই মালকাজগিরি এলাকার তেহসিলদারকে। তার ভালমন্দের খেয়াল রাখতে সারাক্ষণের জন্য নিযুক্ত হন নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের এক কর্মী। মুখ্যমন্ত্রী নিজে জানিয়ে দেন, শুধু একটা ফোন করলেই প্রত্যুষার কাছে পৌঁছে যাবেন তিনি। সাড়ে ছ’লাখ টাকা ডিপোজিটে তেলেঙ্গানা সরকার তার জন্য খুলে দেয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও।

হস্টেলে ভর্তির পর প্রথম ছ’মাস ঠিকঠাকই চলছিল সব কিছু। কিন্তু কিছুদিন হল বেধেছে গোলমাল। গত মাসে প্রত্যুষা তাকে দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের জানিয়ে দিয়েছে, পড়াশোনা করতে তার আর মোটেই ইচ্ছে নেই। এবার বিয়ে করবে সে। আর বিয়ে করবে হস্টেলের সামনের সাইকেলের দোকানের কর্মী ভেঙ্কট রেড্ডিকেই। তার বক্তব্য, ভেঙ্কট তাকে যতটা ভালবাসে তেমন আর কেউ বাসে না। তাকে বিয়ে করে এবার ঘরসংসার করতে চায় সে। ইচ্ছে শুনে মাথায় হাত দেওয়া সরকারি কর্মীরা প্রশ্ন করেছেন, প্রত্যুষার পড়াশোনার জন্য বহু টাকা খরচ করেছেন বহু মানুষ। এভাবে আচমকা পড়াশোনা ছেড়ে দিলে জমা হওয়া সেই টাকার কী হবে? তা ছাড়া খোঁজখবর নিয়ে তাঁরা জেনেছেন, কুর্নুলের আল্লাগাড্ডা এলাকার ছেলে ২৯ বছরের ভেঙ্কটের চালচুলোর বালাই নেই, সাইকেলের দোকানে সামান্য কাজ করে তার যা উপার্জন, তাতে একজনের খরচ চালানোই ভার।

এই পরিস্থিতিতে কন্যাপক্ষ যা করে থাকে তাই করছে সরকারপক্ষ। প্রত্যুষাকে বারবার অনুরোধ করা হচ্ছে, পড়াশোনাটা অন্তত শেষ করতে। আদালতও বলেছে, পড়াশোনা শেষ কর, তারপর ভেব বিয়ের কথা। কিন্তু ১৮ বছরের নাছোড় মেয়ের গোঁ টলেনি এতটুকু।

বাধ্য হয়ে হাইকোর্ট তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে ভেঙ্কটের পারিবারিক অবস্থা খতিয়ে দেখতে, দেখতে সে সৎপাত্র কিনা। পুলিশের রিপোর্টের ভিত্তিতে ঠিক হবে পরবর্তী পদক্ষেপ। এই মুহূর্তে অবশ্য কড়া সরকারি নজরদারিতে প্রত্যুষা- ভেঙ্কটের দেখাসাক্ষাৎ বন্ধ। কিন্তু প্রেমকে কে কবে বন্ধ করতে পেরেছে? হাতে হাতে মোবাইল ফোন আছে না?