নয়াদিল্লি: এবারের খুশির ইদটা শোকের। দাদা এসে জড়িয়ে ধরে কোনও উপহার হাতে তুলে দেয়নি তার। বদলে দাদা বাড়িতে এসেছে কফিনবন্দী হয়ে। দাদা ঔরঙ্গজেবের কফিনের সামনে স্তম্ভিত, শোকার্ত ১৫ বছরের কিশোর ভাই আসিম। কান্না কিছুতেই বাধা মানছে না তার। অথচ, বাড়ি ফেরার আগে ফোনে আসিমের সঙ্গেই কথা বলেছিলেন রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের জওয়ান ৪৪ বছরের ঔরঙ্গজেব। আসিমের একটা ক্রিকেট ব্যাটের খুব ইচ্ছা ছিল। দাদা জামাকাপড়ের সঙ্গে ব্যাট নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তাকে। কিন্তু দাদা ইদে আর বাড়ি ফিরলেন না। জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেলেন নিরস্ত্র ঔরঙ্গজেব।
দাদার এই নৃশংস হত্যার ঘটনাতেও আসিমের ভারতীয় সেনায় যোগগানের আগ্রহে এতটুকু ভাঁটা পড়েনি। সালানির ঐতিহ্য মেনে বাবা ও দাদার মতোই সে ভারতীয় সেনা বাহিনীতে যোগ দিতে চায়।
আসিম কান্না ভেজা গলায় বলেছে, আমার দাদা একটা বেসরকারি গাড়িতে পুঞ্চে আসছিলেন। আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। সেই সময় আমি শুনতে পেলাম, কেউ গাড়ি থামাতে বলছে। ভাবলাম কোনও চেকিং চলছে। আমি ভাবতেই পারিনি যে, আমার নিরস্ত্র দাদাকে জঙ্গিরা অপহরণ করে নিয়ে যাবে।
সেনা জওয়ান ঔরঙ্গজেব রাজৌরিতে আসার জন্য সোপিয়ানে একটি বেসরকারি গাড়িতে উঠেছিলেন।
আসিম বলেছে, দাদা দৌড়তে দৌড়তে এলেন না। অন্যান্য ইদের মতো বাড়িতে এসে আমায় জড়িয়ে ধরলেন না। তিনি কফিনে এলেন। আমি কোনও উপহার চাই না, শুধু আমার দাদাকে চাই। ওরা একজন নিরস্ত্রকে মেরে ফেলল।
দাদার মৃত্যুতেও অকুতোভয় আসিম বলেছে, বাবা ও দাদাদের মতো আমিও সেনা বাহিনীতে যোগ দেব।
ছেলের হত্যার ঘটনায় ভেঙে পড়েছেন আসিম ও ঔরঙ্গজেবের বাবা তথা জম্মু ও কাশ্মীর লাইট ইনফ্যান্ট্রির প্রাক্তন সেপাই মহম্মদ হানিফ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে তাঁর ছেলের খুনের বদলা ৭২ ঘন্টার মধ্যে নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
ইদে বাড়িতে আসার পথে রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের জওয়ান ঔরঙ্গজেবকে জঙ্গিরা খুন করে। হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গি সামির টাইগারকে মেজর রোহিত শুক্লার নেতৃত্বাধীন সেনার যে দল খতম করেছিল, সেই দলে ছিলেন ঔরঙ্গজেব। কালামপোরাতে তাঁকে অপহরণ করা হয়। এরপর তাঁর গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার করা হয় পুলওয়ামা জেলার গুসসু গ্রাম থেকে।
এদিন পুঞ্চে ঔরঙ্গজেবের বাড়িতে যান সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত। নিহত জওয়ানের বাবা-মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন রাওয়াত। সেখানে আধঘন্টা ছিলেন তিনি।