নয়াদিল্লি: সিয়াচেনে তুষারধসের মধ্যে আটকে পড়া জওয়ানদের উদ্ধার করতে এবার বিশেষ দল গঠন করল ভারতীয় সেনা।


‘আভালাঞ্চ প্যান্থার্স মাউন্টেন রেসকিউয়ার্স’ নামে ওই দলটি বাহিনীর লাদাখ স্কাউট ডিভিশন থেকে বাছাই জওয়ানদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে। সূত্রের খবর, এই জওয়ানদের নেওয়ার নেপথ্যে দুটি কারণ রয়েছে।


প্রথমত, এক তাঁরা ভূমিপুত্র হওয়ায় এখানকার সার্বিক আবহাওয়া সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। দ্বিতীয়ত, এঁরা অত্যন্ত দক্ষ। যে কোনও পরিস্থিতিতে দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে লাদাখ স্কাউটের।


গত ৬ ডিসেম্বর, এই দলটি গঠিত হয়। আর গত সপ্তাহে সেনা নর্দার্ন কম্যান্ডের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডি আনবু তাদের বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করেন।


সমুদ্রতল থেকে প্রায় ২২ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত সিয়াচেন হিমবাহকে বিশ্বের উচ্চতম রণক্ষেত্র হিসেবে অভিহিত করা হয়। এখানকার আবহাওয়া চরম প্রতিকূলতায় ভরা। শুধু প্রবল ঠান্ডা নয়, এখানে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার প্রতি মুহূর্তে বদল হয়।


পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সিয়াচেনে জওয়ানদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হল ঠান্ডা ও তুষারঝড়। যত জওয়ানের মৃত্যু শত্রু-গুলিতে হয়, তার চেয়ে ঢের বেশি হয় তুষারধসে।


গত বছরও, তুষারধসের ফলে, বেশ কয়েকজন জওয়ানের মৃত্যু হয়। এমনকী, তিনদিন পর এক হনমন্থাপ্পা নামে এক জওয়ানকে জীবিত অবস্থায় তুষারধসের মধ্যে থেকে উদ্ধার করা হয়। যদিও, তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। দুদিন আগে হনমন্থাপ্পাকে মরণোত্তর সেনা মেডেল প্রদান করা হয়।


এই পরিস্থিতিতেই, এই নতুন বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত ইউনিট গঠন করার ভাবনাচিন্তা শুরু করে সেনা। কারণ, তুষারধস রোখা যাবে না। কিন্তু, বিশেয প্রশিক্ষিত দল দিয়ে যত দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরু করা যাবে, ততই জওয়ানদের প্রাণ বাঁচানোর সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।


সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘আভালাঞ্চ প্যান্থার্স মাউন্টেন রেসকিউয়ার্স’ ইউনিটটি মূলত কুমার পোস্ট সংলগ্ন হেলিপ্যাডের কাছে হবে। যাতে, খবর মিলতেই এই দল কালবিলম্ব না করে ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দিতে সক্ষম হয়।


জানা গিয়েছে, এই দলের কাছে রয়েছে অত্যাধুনিক সেন্সর ও রেডার—যা বরফের মোটা আস্তরণ ভেদ করে আটকে থাকা মানুষের অস্তিত্বকে খুঁজে বের করতে সক্ষম। এর সঙ্গে থাকবে শক্তিশালী কাটার—যা অত্যন্ত ক্ষিপ্ততার সঙ্গে রকফ কাটতে পারে।


এই দলে ঠিক কতজন রয়েছে, তা প্রকাশ না করা হলেও, এক সেনা কর্তা জানান, সম্ভবত তিনটি টিমে ভাগ করা হবে গোটা ইউনিটকে। পাশাপাশি, এ-ও জানা গিয়েছে, ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থার অধীনস্থ স্নো অ্যান্ড আভালাঞ্চ স্টাডি এসটাবলিশমেন্ট (সাসে)-র সঙ্গেও গাঁটছড়া বাঁধা হয়েছে।


সাসে হল এমন একটি সংস্থা যারা প্রতিনিয়ত রবফ ও তুষারধস সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য ও পরিসংখ্যান নিয়ে গবেষণা করে। এই সংস্থাকে বিশেষভাবে সিয়াচেনের মত হাই-অলটিটিউড জোনে ভারতীয় সেনার সহায়তার জন্যই ১৯৬৯ সালে গঠন করা হয়েছিল।