শ্রীনগর ও নয়াদিল্লি:  কাশ্মীর উপত্যকায় চলতি অশান্তির মধ্যে সন্তর্পণে বিশেষ অভিযান শুরু করল সেনাবাহিনী। এই অপারেশন ‘কাম ডাউন’ –এর লক্ষ্য, কাশ্মীরকে জঙ্গি এবং বিক্ষোভকারীদের কবলমুক্ত করা। এ জন্য সেনার একটি ব্রিগেডকেই দক্ষিণ কাশ্মীরে পাঠানো হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে কাশ্মীরের চলতি অশান্তি নিয়ে যে রিপোর্ট এসেছে, তা রীতিমতো উদ্বেগ জনক। রিপোর্টে বলা হয়েছে, উপত্যকায় কার্যত ‘জঙ্গলরাজ’ চলছে। জঙ্গিরা এবং তাদের সমর্থকরা বিক্ষোভের আয়োজন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রায় ৪০০০ অতিরিক্ত সেনা পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে বাহিনীকে যতটা সম্ভব কম বলপ্রয়োগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে সরকারি সূত্রের খবর।

উপত্যকায় পাঠানো বাহিনী দক্ষিণ কাশ্মীরের চার জেলা-পুলওয়ামা, সোপিয়ান, অনন্তনাগ এবং কুলগামে ছড়িয়ে পড়েছে। হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গি বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর উপত্যকায় চলতি অশান্তির প্রভাব এই জেলাগুলিতেই সবচেয়ে বেশি পড়েছে।

সেনার ওই বিশেষ বাহিনীকে সহায়তা করছে সিআরপিএফ এবং রাজ্য পুলিশ। বিভিন্ন এলাকায় চলছে চিরুনি তল্লাশি। এই এলাকাগুলিতে পথগুলিতে গাছ, ইলেকট্রিক খুঁটি, বড় বড় বোল্ডার, পোড়া গাড়ি ফেলে যাতায়াত অবরুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এগুলি সরিয়ে পথগুলিকে অবরোধ মুক্ত করার কাজও করছে বাহিনী।

পুলওয়ামার করিমাবাদ এলাকায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে বাহিনী এখন সোপিয়ান ও কুলগামের দিকে রওনা দিয়েছে। যদিও ইদ উত্সবের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে। উত্সব শেষ বলে ফের শুরু হবে অভিযান। যোগ দেবে আরও বেশি সেনা।

গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, লাঠি, পাথর, পেট্রোল বোমা হাতে নিয়ে কাশ্মীরী তরুণরা জাতীয় সড়কগামী প্রধান রাস্তাগুলিতে টহল দিচ্ছে এবং সাধারণ মানুষকে বাড়ির বাইরে বা শ্রীনগরে যেতে বাধা দিচ্ছে। এই রিপোর্ট পাওয়ার পরই অতিরিক্ত বাহিনী পাঠিয়ে ওই এলাকাগুলি জঙ্গি-বিক্ষোভকারীদের কবল-মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

একইসঙ্গে গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ৮ জুলাই ওয়ানির মৃত্যুর পর যে বিক্ষোভ শুরু হয় তারমধ্যে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১০০ জঙ্গি দক্ষিণ কাশ্মীরে ঢুকে পড়েছে।

যে এলাকাগুলিতে জঙ্গিরা গা-ঢাকা দিয়েছে বলে সন্দেহ সেগুলি হল সোপিয়ানের হেফ-শ্রীমল, পুলওয়ামা জেলার সাম্বোরা, লীলাহর, পুলওয়ামা টাউন, ত্রাল, কাকপোরা, কুলগাম জেলার কাইমোহ, রেধওয়ানি এবং অনন্তনাগ জেলার রেধওয়ানি।

পপলার ও পাইন গাছের জঙ্গলের আড়ালে জঙ্গিরা নতুন সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলে আধিকারিকরা জানিয়েছেন। খবর পাওয়া গিয়েছিল যে, সোপিয়ানের কামলা জঙ্গলে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ চলছে। কিন্তু অভিযান চালিয়ে কাউকেই পাওয়া যায়নি।

রিপোর্টে জানা গেছে, মধ্য কাশ্মীরের বুধগাম জেলা থেকে দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলায় ঢুকছে জঙ্গিরা। সেখান থেকে তারা নিরাপত্তা বাহিনীর অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।