নয়াদিল্লি: নাবালিকা ধর্ষণে আজীবন সাজাপ্রাপ্ত স্বঘোষিত ধর্মগুরু আসারাম বাপু বাকি জীবনটা জেলের চার দেওয়ালের মধ্যেই কাটাতে চলেছে।


প্রশ্ন হল, এখন আসারামের বিলাসবহুল বাংলো, চারশোর বেশি আশ্রম, চল্লিশের বেশি স্কুল, কয়েক হাজার একর জমি, ব্যবসা এবং কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির কী হবে? এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আসারামের মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা! এখন এগুলির দেখভাল কে করবে?



আসারামের ছেলে নারায়ণ সাইও বাবার মতো জেলে বন্দি রয়েছে। ধর্ষণ, মারপিঠ ও হত্যার মতো একাধিক মামলা চলছে তার বিরুদ্ধে। যা পরিস্থিতি, সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। এই পরিস্থিতিতে গোটা এস্টেট ও ব্যবসার ভার ও দায়িত্ব এসে পড়েছে আসারামের মেয়ে ভারতীশ্রীর ওপর।


এক্ষেত্রে অনেকেই এই ঘটনার সঙ্গে ধর্ষণে দোষী-সাব্যস্ত হওয়া আরেক ধর্মগুরু গুরমীত রাম রহিম ইনসানের মিল পাচ্ছেন। সেক্ষেত্রেও, রাম রহিম জেলে যাওয়ার পর গোটা সম্পত্তির মালকীন হয় তার একমাত্র মেয়ে হনিপ্রীত। যদিও, বর্তমানে, সেই মেয়েও জেলে রয়েছে।



জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই গোটা ব্যবসার দায়িত্ব নিজে তুলে নিয়েছেন আসারামরে কন্যা ভারতীশ্রী। তাঁর নির্দেশমতোই, সব কিছু হচ্ছে। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন আসারামের মতোই তার মেয়েও ধর্মীয় বক্তৃতা দেন। পাশাপাশি, তিনি ভক্তি-গীতিও গান। বিগত কয়েক বছর ধরেই ব্যবসায় মনোনিবেশ করেছেন ভারতীশ্রী।


জানা গিয়েছে, দেশের বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চলে আসারামের ৪০০-র বেশি আশ্রম রয়েছে। আশ্রমগুলিতে মাঝেমাঝেই দর্শন করেন ভারতীশ্রী। বৈঠক করেন সেখানকার আধিকারিকদের সঙ্গে। তাঁকে এই বিষয়ে সাহায্য করেন মা লক্ষ্মীদেবী।



২০১৩ সালে যখন আসারামের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে, সেই সময় গুজরাতের সুরাত থেকে ভারতীশ্রী ও লক্ষ্মীদেবীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। দুজনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ, এই মামলায় তাঁরা আসারামকে সাহায্য করেছেন। যদিও, পরে দুজনই জামিন পেয়ে যান।


আরেকটি প্রশ্ন যেটা সকলের মনে উঠছে তা হল, কী করে স্রেফ ধর্মীয়-প্রবচন দিয়ে এত বিপুল সম্পত্তির মালিক হল আসারাম? সাতের দশকে সবরমতী নদীর তীরে একটি ঝুপড়িতে থাকত আসারাম। সেখানে থেকে বর্তমানে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পত্তির উৎস কী?



জানা গিয়েছে, দেশভাগের সময় বাবা-মার সঙ্গে পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের আমদাবাদ থেকে ভারতে এসেছিল আসারাম। মনিনগরের একটি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে আসারাম। বাবার মৃত্যুর পর লেখাপড়া ছাড়তে হয়। কিছুদিন ছোটখোটো চাকরি করার পর ‘আধ্যাত্মিক খোঁজে’ হিমালয়ে যায় আসুমল ওরফে আসারাম। সেখানে তার সাক্ষাত হয় গুরু লীলাশাহের সঙ্গে।


জানা গিয়েছে, ১৯৬৪ সালে ওই গুরুই তার নাম আসারাম দিয়েছিলেন। এরপর, গুজরাতের আমদাবাদে ফিরে আসে আসারাম। মোতেরায় সবরমতীর তীরে তপস্যা শুরু করে। ১৯৭২ সালে নদীর তীরে ‘মোক্ষ কুটীর’ স্থাপন করে আসারাম। বলা যেতে পারে, সেখান থেকেই আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় আসারাম। কয়েক বছরের মধ্যেই তার ঝুপড়ি আশ্রমে পরিণত হয়।