পটনা: করোনাভাইরাসজনিত অতিমারী পরিস্থিতিতে দেশে প্রথম বড়সড় নির্বাচন। বিহার বিধানসভা ভোটের বহুপ্রতিক্ষিত ফলাফল আগামীকাল। এবিপি সি-ভোটার বুথফেরত সমীক্ষার ফলাফল অনুসারে, এগিয়ে রয়েছে আরজেডি নেতৃত্বাধীন ইউপিএ। সমীক্ষার ফলাফলে ইঙ্গিত, ক্ষমতায় ফেরার পথ কঠিন হতে পারে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র। তবে কী ৩১ বছরের তেজস্বী যাদবই পটনার তখতে আসীন হতে চলেছেন?
এখন দেখে নেওয়া যাক, বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের আরও কয়েকটি সম্ভাবনার দিক।


এবারের ভোটের প্রচারের শেষদিন পূর্ণিয়ার একটি জনসভায় অবসরের ইঙ্গিত দিয়েছেন জেডি-ইউ নেতা নীতীশ কুমার। ভোটারদের মধ্যে সহানুভূতির ঝড় তুলতে এবং চতুর্থবার ক্ষমতায় ফেরার পথ প্রস্তুত করতে আবেগ উস্কে নীতীশ বলেছিলেন, আজ ভোট প্রচারের আজ শেষ দিন। এটাই আমার শেষ ভোট। শেষ ভালো তো সব ভালো।
এবিপি সি-ভোটার বুথফেরত সমীক্ষার ফল অনুযায়ী, প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বাধীন আরজেডি পেতে পারে ৮১-৮৯ আসন। তেজস্বীই বিহারে আরজেডি, কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট পার্টিগুলি সহ পাঁচ দলের মহাজোটের নেতৃত্বে রয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বাধীন জোট ১০৮-১৩২ আসন পেতে পারে।
বিহারে বিধানসভায় একক বৃহত্তম দল আরজেডি। গত বিধানসভা নির্বাচনে তারা ৭১ আসনে জয়ী হয়েছিল। এ কথা তুলে ধরেই তেজস্বী উল্লেখ করেছেন যে, একক বৃহত্তম দলের নেতা কীভাবে বিধানসভায় বিরোধী আসনে বসতে পারেন।
বুথ ফেরত সমীক্ষার ইঙ্গিত, কোনও দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না।
চিরাগ কি কিংমেকার হতে পারবেন?
৩৪ বছরের সাংসদ ও লোকজন শক্তি পার্টি (এলজেপি) নেতা ভোটের আগে নীতীশের সঙ্গে আদর্শগত মতপার্থক্যের কথা জানিয়ে রাজ্যে এনডিএ ছেড়ে পৃথকভাবে লড়াইয়ের ঘোষণা করেছিলেন। ভোটের প্রচারে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি নিজের অনুরাগ ও কেন্দ্রে এনডিএ-র সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা জানানোর কোনও সুযোগই ছাড়েননি তিনি। জোট ছেড়ে বেরিয়েও তিনি বিজেপির হয়ে প্রচার করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী মোদির পক্ষে ভোটদানের আর্জি জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এলজেপি বিজেপির বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয়নি। যে কটি আসনে দুই দলের লড়াই হচ্ছে, সেগুলিকে স্বাস্থ্যকর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দিতা আখ্যা দিয়েছেন চিরাগ।

১৪৩ আসনে লড়াই করেছে এলজেপি। এবিপি সি-ভোটার সমীক্ষা অনুযায়ী, সেভাবে দাগ কাটতে সম্ভবত পারছে না এলজেপি। ১-৩ আসনে জয়ী হতে পারে তারা। বর্তমানে বিধানসভায় তাদের বিধায়ক সংখ্যা ২।
আসন সংখ্যা নগন্য হলেও চিরাগ কিংমেকার হয়ে উঠতে পারেন। কারণ, সমীক্ষায় ত্রিশঙ্কু বিধানসভার পূর্বাভাস এসেছে। এক্ষেত্রে চিরাগের প্রাপ্ত আসন ফারাক গড়ে দিতে পারে। ভোটের প্রচারে তিনি বারেবারেই বলেছেন, বিহারে নতুন মুখ্যমন্ত্রীর জন্য তিনি বিজেপির পাশে দাঁড়াবেন। যদিও বিজেপি ভোটের প্রচারে এলজেপি-কে ‘ভোট কাটুয়া’ তকমা দিয়েছে। বিজেপি বারেবারেই জানিয়েছে, যাই হোক না কেন, নীতীশই মুখ্যমন্ত্রী হবেন। দল জেডিইউ-র থেকে বেশি আসন পেলেও নীতীশই মুখ্যমন্ত্রী হবেন।
আবার এমনও হতে পারে, চিরাগ তেজস্বীর সঙ্গেও হাত মেলাতে পারেন। কারণ, দুজনের শত্রু নীতীশ।
তেজস্বীর নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়াবে যাদব পরিবার?
লালু প্রসাদের যাদব পরিবার বিহারে একাদিক্রমে ১৫ বছর ক্ষমতায় আসীন ছিল। রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা ইস্যুকে হাতিয়ার করে নীতীশ আরজেডি-কে ক্ষমতাচ্যূত করেছিলেন। তারপর থেকেই ক্ষমতার বাইরে যাদব পরিবার। ২০১৫-র বিধানসভা নির্বাচনে নীতীশের সঙ্গে জোট বেঁধে কিছুদিনের জন্য ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছিল আরজেডি। কিন্তু নীতীশ শিবির বদল করায় বিধানসভায় একক বৃহত্তম দল হওয়া সত্ত্বেও ফের বিরোধী আসনেই বসতে হয় তাদের। বুথফেরত সমীক্ষা অনুযায়ী, আরজেডি ৮১-৮৯ আসন পেতে পারে এরফলে প্রায় দেড় দশক পরে রাজ্যের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন ঘটতে পারে আরজেডি-র।
এবিপি সি-ভোটার বুথ ফেরত সমীক্ষায় ফল অনুযায়ী, নীতীশের নেতৃত্বাধীন এনডিএ ১০৪-১২৮ আসন পেতে পারে। এরমধ্যে জেডিইউ পেতে পারে ৩৮-৪৬ আসন। তিনবার মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকার পর এবার ক্ষমতায় ফেরার পথ কঠিন হতে পারে নীতীশের।
করোনা অতিমারী পরিস্থিতির মোকাবিলার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা, পরিযায়ী সংকটে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে না পারার মতো কারণ, সেইসঙ্গে বন্যা নীতীশের ক্ষমতায় ফেরার ক্ষেত্রে কাঁটা বিছিয়ে দিতে পারে। সেইসঙ্গে রাজ্যে বেকারত্বের হার ঊর্ধ্বমুখী। ফলে ভোটারদের সরকার-বিরোধী মনোভাবের মাশুল গুণতে হতে পারে জেডিইউ-বিজেপি জোটকে।