নয়াদিল্লি: বরপক্ষ গামি গাড়ি, গয়নাগাটি সহ একগুচ্ছ দাবিদাওয়া পেশ করেছে। মেনে নিতে আপত্তি নেই কনেপক্ষরও, ২৫ তারিখ হবে বিয়ে। সব ঠিকঠাক, এমন সময় বেঁকে বসলেন কিনা খোদ নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর এক ঘোষণায় ৫০০, ১,০০০-এর নোট বাতিল হয়ে গেল আর ভেস্তে গেল পণের বিনিময়ে বিয়ে। প্রথমে মোদীকে শাপ দিচ্ছিলেন বাবা মা। পরে ভেবে দেখেছেন, কাজটা ভালই হয়েছে। ঘরের টাকা বাইরে ধরে দিয়ে বিয়েটা দিতে হয়নি আর হয়তো মেয়েটাও বেঁচেছে।


এই একুশ শতকে যে মেয়ে পণের বিনিময়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে রাজি হয়েছিলেন, তিনি অবশ্য রাস্তায় ফ্যা ফ্যা করে চাকরির সন্ধানে ঘোরা কোনও বেকার নন। পূর্ব দিল্লির বাসিন্দা ওই যুবতী প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী। তাঁর সঙ্গে যাঁর বিয়ে ঠিক হয়েছিল, তিনিও তথাকথিত আলোকপ্রাপ্ত, দক্ষিণ দিল্লির বদরপুরের এক বহুজাতিক সংস্থায় সিনিয়র এক্সিকিউটিভ। বিয়েতে প্রচুর গয়নাগাটির পাশাপাশি দামি গাডি় চেয়েছিল বরপক্ষ। কনে তরফেরও আপত্তি ছিল না। কিন্তু বাদ সাধল নোট বাতিল।

৫০০, ১,০০০-এর নোট বাতিল হয়ে যাওয়ায় বিয়ের আগেই গাড়ি আর দাবিমতো গয়না কিনতে পারেননি পাত্রীর আত্মীয়স্বজন। সে কথা বরপক্ষকে জানাতেই তারা রে রে করে ওঠে। জানিয়ে দেয়, দাবি না মেটালে বিয়ে সম্ভব নয়। পাত্রীপক্ষ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ব্যাঙ্কে টাকার জোগান স্বাভাবিক হয়ে গেলেই পণ মিটিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তাতে চিড়ে ভেজেনি। উল্টে কনেপক্ষকে যাচ্ছেতাই অপমান করে বিয়েই ভেঙে দেয় তারা।

পাত্রী জানিয়েছেন, এপ্রিল মাসে, এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের মধ্যস্থতায় ঠিক হয় তাঁদের বিয়ে। গত আট মাসে পাত্রপক্ষের নানারকম দুর্ব্যবহার সহ্য করতে হয়েছে তাঁদের। কিন্তু বিয়ে নাকচ করে দেওয়ার পথে হাঁটেননি তাঁরা। ‘স্বাভাবিক’ বলে মেনে নিয়েছিলেন পণের দাবিও। কিন্তু নোট বাতিলের জেরে বিয়ের আগেই পণ মিটিয়ে দেওয়ার দাবি মেনে নিতে না পারায় চটে যায় বরপক্ষ। তারা বলে, পণ একটা প্রথা, ভারতীয়রা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এটা মেনে চলেছে। তাদের প্রশ্ন, এতদিন পণের কেনাকাটা মিটিয়ে ফেলা হয়নি কেন, নোট বাতিল পর্যন্ত কেন অপেক্ষা করছিল পাত্রীপক্ষ। শেষমেষ তারা জানিয়ে দেয়, দাবিদাওয়া না মেটানো পর্যন্ত বিয়ে হবে না। এই পরিস্থিতিতে এখনই দাবি মেটানো সম্ভব নয় বলে কনেপক্ষ জানিয়ে দেওয়ায় পাত্রপক্ষ বিয়েই ভেঙে দেয়।

মেয়ের বাবা মা প্রথমে যথারীতি প্রধানমন্ত্রীকেই কাঠগড়ায় তুলেছিলেন। ভেবেছিলেন, আগে থেকে বরপক্ষের দাবিমতো কেনাকাটা সেরে রাখলে ভাল হত। পরে উপলব্ধি করেছেন, যা হয়েছে ভালর জন্য হয়েছে। না হয় ভেস্তেই গেল বিয়ে। ওই লোভের আগুনে তাঁদের মেয়েরও তো আহুতি হতে পারত!