ডোকালাম নিয়ে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দু দেশের মধ্যে যে চাপান-উতোর চলছে সে বিষয়ে এক বিবৃতিতে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, ‘যুদ্ধ কোনও সমাধান নয়। এমনকী যুদ্ধের পরেও আলোচনা করতে হয়। তাই যুদ্ধ ছাড়াই আলোচনা হোক। ধৈর্য, মন্তব্যের উপর নিয়ন্ত্রণ এবং কূটনীতি সমস্যার সমাধান করতে পারে। আমরা ধৈর্য বজায় রেখে সমস্যা মেটানোর জন্য চিনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাব।’
ডোকালাম ইস্যুতে সম্প্রতি ভারত-চিনের সামরিক ও কূটনৈতিক বাদানুবাদ তুঙ্গে উঠলেও, দু দেশের সম্পর্ক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই খারাপ। চিনের বাধাতেই রাষ্ট্রপুঞ্জের পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠীর সদস্য হতে পারেনি ভারত। চিনই জইশ-ই-মহম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষেধাজ্ঞায় বাধা দিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও চিনের সঙ্গে যুদ্ধের পথে হাঁটার বদলে ভারত কূটনৈতিক পথেই বিরোধ মেটাতে চায় বলে জানিয়েছেন সুষমা।
চিনের কূটনীতিবিদদের সঙ্গে দেখা করা এবং চিনের ডাকা ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ সম্মেলনে ভারতের যোগ না দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলায় কংগ্রেসের সমালোচনা করেছেন সুষমা। তিনি বলেছেন, ‘চিনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করার আগে কংগ্রেস নেতাদের উচিত ছিল সরকারের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা। ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’-এর সঙ্গে ভারতের জাতীয় আবেগ জড়িত। প্রধান বিরোধী দল হিসেবে কংগ্রেসের দায়িত্ব আছে। ১৯৬২ সালে চিনের সঙ্গে যুদ্ধের সময় অটলবিহারী বাজপেয়ী চিঠি দেওয়ার পর সংসদের অধিবেশনের ব্যবস্থা করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। আমিও ডোকালাম ইস্যুতে দু দিন সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিলাম। বিরোধীরা আলোচনায় সন্তুষ্ট হয়েছে।’
এর আগে ডোকালাম ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করেন কংগ্রেস সাংসদ আনন্দ শর্মা। তিনি বলেন, আস্তানা ও হামবুর্গে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে কী কথা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছুই বলেননি প্রধানমন্ত্রী। তিনি এরকম সংবেদনশীল বিষয়ে নীরব থাকতে পারেন না। এরপরেই কংগ্রেসকে পাল্টা আক্রমণ করেন বিদেশমন্ত্রী। বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ নিয়ে রাজীব শুক্ল যে মন্তব্য করেছেন, সেটা ব্যক্তিগত বিষয়। তাঁর এই বক্তব্য শুনে সুষমা কটাক্ষ করেন, কংগ্রেস এত গণতান্ত্রিক দল হয়ে গিয়েছে, সব সদস্যই নিজের মতো মন্তব্য করছেন!
তৃণমূল সাংসদ মণীশ গুপ্ত বলেন, ১৯৬২ সালের যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নেয়নি ভারত। সিপিএম সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরি ভারতের বিদেশনীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর অভিযোগ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষার জন্য কাজ করছে ভারত। সমাজবাদী পার্টি সাংসদ রামগোপাল যাদব বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে যেরকম সম্পর্ক থাকা উচিত, ভারতের সেই সম্পর্ক নেই। সবদিক থেকেই চাপে ভারত। চিন ও পাকিস্তানের বন্ধুত্ব বাড়ছে। ভারতের প্রতি রাশিয়ার যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল, সেটাও আর নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি করার আগে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল সরকারের।