চাইলে আমাকে ‘কুকুর’ বলুন কিন্তু পাকিস্তানি নয়, বললেন বালুচ শরণার্থী
ABP Ananda, web desk | 20 Aug 2016 07:47 AM (IST)
নয়াদিল্লি: তাঁর জন্ম পাকিস্তানের কোয়েটায়, পাসপোর্ট কানাডার। কিন্তু নিজেকে পাকিস্তানি বলতে তাঁর ঘোর আপত্তি। ২৫ বছরের মাজদাক দিলশাদ বালুচ স্পষ্ট জানাচ্ছেন, দিল্লির অভিবাসন দফতরকে বোঝাতে তাঁর কালঘাম ছুটে যায়, যে তিনি পাকিস্তানি নন। ইচ্ছে হলে তাঁকে ‘কুকুর’ বলে ডাকা যায়, তাতে তাঁর সমস্যা নেই। কিন্তু ‘পাকিস্তানি’ নৈব নৈব চ। তিনি বালুচ। স্রেফ বালুচ। পাক অধিকৃত বালুচিস্তানে পাক সেনার নির্মম অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে বহু বালুচ নাগরিকের মত মাজদাকও মাতৃভূমি ছেড়েছেন। তাঁর পরিবার এখন কানাডায় থাকে। আর মাজদাক স্ত্রীকে নিয়ে ভারতে এসেছেন বালুচ স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে ভারতীয়দের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে। ৭০ বছরে এই প্রথম দিল্লি তাঁদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে স্বীকৃতি দেওয়ায় মাজদাকরা খুশি। যেভাবে লালকেল্লা থেকে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বালুচিস্তানের কথা বলেছেন, তাতে তাঁদের কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই। এখন তাঁদের প্রার্থনা একটাই। নির্বাসিত তিব্বত সরকারের মত বিদেশের মাটিতে বালুচ সরকার গড়ে তোলায় সাহায্য করুক দিল্লি। বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বালুচরা চেষ্টা করছেন, কীভাবে দ্বীপান্তরে একটি ‘স্বাধীন’ সরকার গড়ে তোলা যায়। বালুচিস্তানের স্বাধীনতার পক্ষে মুখ খোলায় মাজদাকের বাবাকে তুলে নিয়ে যায় পাক সেনা। মাকে হেনস্থা করা হয়। তছনছ করা হয় সম্পত্তি। বাবা মুক্তি পেলে কানাডার আশ্রয় চান তাঁরা। তিনি জানাচ্ছেন, বালুচিস্তানে সকলের চোখের আড়ালে নিয়মিত গণহত্যা ঘটাচ্ছে পাক সেনা। বালুচদের শিক্ষার কোনও ব্যবস্থা করেনি পাক সরকার। ১০ কিলোমিটার অন্তর অন্তর গড়ে তোলা হচ্ছে মাদ্রাসা, যাতে বালুচ শিশুদের মগজধোলাই করা যায়। প্রদেশের সব উঁচু সরকারি পদে বসিয়ে রাখা হয়েছে পাকিস্তানিদের, বালুচ নাগরিকদের রোজগার নেই। কয়লা সহ যাবতীয় প্রাকৃতিক সম্পদ পাক সহায়তায় নিয়ে যাচ্ছে চিনা কোম্পানিগুলো। আর না খেয়ে মরছেন সাধারণ বালুচ। মাজদাক আরও জানিয়েছেন, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর বালুচিস্তানে অশান্তিতে কোনও ভূমিকা নেই। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বালুচিস্তানের বিদ্রোহ সেখানকার মানুষের যন্ত্রণার ফসল। এমনকী পাক সংবাদমাধ্যমকেও সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয় না। তিনি জানিয়েছেন, এই ২৫ বছর বয়সেই পাক সেনার হাতে মৃত কত শত সহ নাগরিকের দেহ দেখেছেন তিনি, যাঁদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেহ থেকে উপড়ে বার করে নেওয়া হয়েছে। এখন আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কাছে মাজদাক তাঁদের জন্য সুবিচার চান।