নয়াদিল্লি: রাফালে যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলল কংগ্রেস। বিরোধী দলের অভিযোগ, এই  চুক্তির ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে আপোস করে সরকারি কোষাগারের লোকসান ঘটিয়ে পছন্দের শিল্প সংস্থাকে সুবিধা দেওয়া হয়েছে।  বিজেপি এই অভিযোগ খারিজ করে বলেছে, অগস্টা-ওয়েস্টল্যান্ড চপার দুর্নীতিতে দলের শীর্ষ নেতাদের জেরার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় কংগ্রেস মনোযোগ ঘোরাতে এ ধরনের অভিযোগ তুলছে।
কংগ্রেসের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান রণদীপ সুরজেওয়ালা দাবি করেছেন, রাফালে চুক্তির ক্ষেত্রে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিন্দুস্থান অ্যারোনটিক্স লিমিডেট (হ্যাল)-এর স্বার্থ উপেক্ষা করেছে। কারণ, রাফালে বিমান প্রস্তুতকারী  ফরাসি সংস্থা ডসল্ট হ্যালকে প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে অস্বীকার করেছে। বরং তারা রিলায়েন্স ডিফেন্সের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।
সুরজেওয়ালার আরও অভিযোগ, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের আমলে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পর  যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল তার থেকে অনেক বেশি দামে এই যুদ্ধবিমান কেনা হচ্ছে।
সুরজেওয়ালা বলেছেন, ২০০৭-এর ২০ আগস্ট ইউপিএ সরকার ১২৬ টি মিডিয়াম  মাল্টি-রোল কমব্যাট এয়ারক্র্যাফ্ট ক্রয়ের জন্য টেন্ডার ডেকেছিল। আলোচনার পর রাফালে ও ইউরো ফাইটার টাইফুন বিবেচনার মধ্যে আসে।
২০১২-র ১২ ডিসেম্বর রাফালে-কে এল ১ ভেন্ডর হিসেবে ঘোষণা করা হয়।  টেন্ডারে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে এর দরই সবচেয়ে কম ৫৪ হাজার কোটি দাম ছিল। সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, ১২৬ টি যুদ্ধবিমানের মধ্যে ১৮ টি উড়ানসক্ষম অবস্থায় আসবে। বাকি ১০৬ টি প্রযুক্তির হস্তান্তরের মাধ্যমে তৈরি করবে হ্যাল।
সুরজেওয়ালা বলেছেন, মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর আগেকার ১২৬ টি যুদ্ধবিমান ক্রয়ের ডন্য রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল (আরএফপি) বাতিল করে দেওয়া হয়। ২০১৬-র ২৬ সেপ্টেম্বর ৮.৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যে ৩৬ টি রাফালে ফাইটার জেট ক্রয়ের চুক্তি হয়।
কংগ্রেস নেতা বলেছেন, এরপর অনিল অম্বানির রিলায়েন্স ডিফেন্স লিমিটেড ভারতে প্রতিরক্ষা উত্পাদনের জন্য যৌথ উদ্যোগ গড়ে তুলতে ডসল্ট অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে ২০১৬-র ৩ অক্টোবর জোট বাঁধে।
সুরজেওয়ালার অভিযোগ, রাফালে ক্রয়ের এই চুক্তির ক্ষেত্রে কোনও স্বচ্ছতা নেই। প্রতিরক্ষা সংগ্রহের প্রক্রিয়ার বাধ্যতামূলক ধারাও লঙ্ঘিত হয়েছে।রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হ্যালকে প্রযুক্তি সরবরাহের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ ক্ষুন্ন করা হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক শিল্পপতির আর্থিক স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে।
সুরজেওয়ালার দাবি, ইউপিএ আমলের আলোচনা অনুযায়ী প্রতিটি যুদ্ধবিমানের দাম হত ৫২৬.১০ কোটি টাকা। কিন্তু এখন প্রতি যুদ্ধবিমানের দাম হবে ১৫৭০.৮০ কোটি টাকা।
কংগ্রেস মোদী সরকারের বিরুদ্ধে জাতীয় স্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে আপোস ও বড় ধরনের কেলেঙ্কারির অভিযোগ করেছে।
সুরজেওয়ালার অভিযোগ, ডসল্ট ও রিলায়েন্স ডিফেন্স লিমিটেডের চুক্তির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা, নিরাপত্তা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ও ফরেন ইনভেস্টমেন্ট প্রোমোশন বোর্ডের অনুমোদন ছিল না।
রিলায়েন্স ডিফেন্স এই অভিযোগ খারিজ করে জানিয়েছে, তাদের অধীনস্ত সংস্থা রিলায়েন্স অ্যারোস্ট্রাকচার এবং ডসল্ট একটি যৌথ উদ্যোগ ডসল্ট রিয়ালেন্স অ্যারোস্পেস গড়ে তুলেছে। দুই বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে এই যৌথ উদ্যোগ গড়ে উঠেছে। এতে ভারত সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। ২০১৬-র জুনেই সরকার প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ৪৯ শতাংশ এফডিআইয়ের অনুমতি দিয়েছিল। তাই উল্লিখিত যৌথ উদ্যোগ গঠনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বা সিসিএস-এর অনুমতি প্রয়োজন নেই।