নয়াদিল্লি: এবার কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকারের বিরুদ্ধে ৪৫ হাজার কোটি টাকার টেলিকম দুর্নীতির অভিযোগ আনল কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ,  ছয় বৃহত্ টেলিকম কোম্পানির স্বার্থরক্ষার জন্য কেন্দ্র সরকার তলে তলে কাজ করছে। এতে সরকারি অর্থের নয়ছয় হয়েছে। এক্ষেত্রে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)-র একটি রিপোর্টকে হাতিয়ার করেছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার অভিযোগ, মোদী সরকার প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার টেলিকম দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে চাইছে। দলের দুই মুখপাত্র শক্তিসিন গোহিল ও আরপিএন সিংহর সঙ্গে একটি যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে সুরজেওয়ালার  দাবি করেছেন, সিএজি যা খতিয়ে দেখেছে তাতে স্পষ্ট যে, সরকারি কোষাগারের ক্ষতি করেই পুঁজিপতিদের সুবিধা করে দিচ্ছে সরকার। সুরজেওয়ালার দাবি, সরকার ভারতী এয়ারটেল, ভোডাফোন, রিলায়েন্স, আইডিয়া, টাটা এবং এয়ারসেল-এই ছটি কোম্পানির স্বার্থরক্ষা করছে।


কংগ্রেস নেতা সুরজেওয়ালার দাবি, ওই৬ টি টেলিকম সংস্থার থেকে বকেয়া টাকা আদায় করছে না মোদী সরকার। কংগ্রেসের যুক্তি, ১৯৯৯ সালে তৎকালীন এনডিএ সরকার নতুন টেলিকম নীতি নিয়ে আসে। সেই নীতি অনুসারে টেলিকম সংস্থাগুলি থেকে লাইসেন্স ফি আদায় করার কথা বলা হয়েছিল। পরে সরকার এককালীন মাফ করে দেয়। কিন্তু ২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ৬ টি টেলিকম সংস্থার থেকে সেই ফি আদায় করা হয়নি। আদালতের নির্দেশে সিএজি এই সংস্থাগুলির অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ৬ টি সংস্থা নিজেদের আয় ৪৫ হাজার কোটি টাকা কম দেখিয়েছে। যার থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, সদ্যই মন্ত্রিসভার রদবদলে টেলিকমমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি আইন ও বিচারমন্ত্রী হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে কংগ্রেস নেতারা বলেন, টেলিকমমন্ত্রকে যা ঘটেছে তা প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্মতি ব্যতিরেকে হওয়া সম্ভব নয়। তাই এক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তিবিশেষকে দায়ী করা ঠিক নয়। এভাবে কংগ্রেস বুঝিয়ে দিয়েছে যে, তাদের নিশানা মোদীই।

সুরজেওয়ালা বলেছেন, সিএজি-র রিপোর্ট অনুযায়ী, ছয় টেলিকম সংস্থা তাদের আয় ৪৫ হাজার কোটি টাকা কম দেখিয়েছে। এর থেকে সরকারের প্রাপ্য জরিমানা ও সংশ্লিষ্ট কর বাদ দিয়েই প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। তাঁর আরও অভিযোগ, ওই কোম্পানিগুলির ব্যবসা, গ্রাহক সংখ্যা ও আয় বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১০-এর পরবর্তী সময়ের হিসেব করলে সরকারের ক্ষতির পরিমাণ ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি হবে।

সুরজেওয়ালার অভিযোগ, সিএজি-র রিপোর্টে কোষাগারের এমন ক্ষতির দিকটি প্রকাশ্যে আসার পরও সেই টাকা আদায় না করে টেলিকম মন্ত্রক আর একটি অডিট করার কাজে নেমেছে।

যদিও সরকারের পক্ষ থেকে কংগ্রেসের অভিযোগ খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। সরকার বলেছে, ইউপিএ জমানায় ২০০৬-০৭ এবং ২০০৯-১০-এর ছয়টি টেলিকম কোম্পানির আন্ডারস্টেটমেন্ট সংক্রান্ত সিএজি-র রিপোর্ট জমা পড়েছে। সরকার ইতিমধ্যেই বকেয়া অর্থ আদায়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।