নয়াদিল্লি: করোনা পরিস্থিতে বাস্তবের মাটিতেই 'দ্য টার্মিনাল' ছবির চিত্রনাট্য! ৫৪ দিন ধরে নয়াদিল্লির ইন্দিরা গাঁধি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ট্রানজিট এলাকায় বসবাস করছেন জার্মান প্রৌঢ়!


মার্চের ১৮ তারিখ নাগাদ ইজগার্ড জিবার্ট নামে বছর ৪০ এর এক জার্মান প্রৌঢ় হ্যানোয় থেকে যাচ্ছিলেন ইস্তামবুলের পথে। লকডাউনের জেরে সেইদিনই বাতিল হয়ে যায় টার্কি সহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক বিমানের ওঠানামা। এর কয়েকদিন পরে অর্থাৎ ২৫ মার্চ থেকে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা হয় ভারতে। বাতিল হয়ে যায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্ত বিমান চলাচল।

নিজের দেশে কিছু অপরাধমূলক কাজকর্মের রেকর্ড ছিল জিবার্টের। এর জন্য তাঁর ভিসা পেতে কিছু সমস্যা হচ্ছিল। বারবার অনুরোধ করার পরেও কোনও উত্তর আসেনি জার্মান দূতাবাস থেকে। ১৮ মার্চ ভিয়েতনাম থেকে আসা বিমানে করে নয়াদিল্লি এসে পৌঁছান তিনি। তাঁর কথা ছিল সেখান থেকে ইস্তামবুলের বিমান ধরার। কিন্তু ট্রানজিট এলাকায় গিয়ে জানতে পারেন বাতিল হয়েছে তাঁর বিমান!

বেশ কিছুদিন পরে জার্মান দূতাবাস থেকে দিল্লি পুলিশকে জানানো হয় জিবার্ট জার্মানির একজন অপরাধী। তাঁর খোঁজ চলছে। কিন্তু বিদেশি মাটিতে থাকার জন্য তাঁকে গ্রেফতার করতে পারছে না জার্মানি। পুলিশ সূত্র খবর, ট্রানজিট এলাকায় বড়জোর একদিন থাকতে পারেন বিদেশি যাত্রীরা। কিন্তু সেই এলাকা থেকে বেরোতে গেলে প্রয়োজন হয় ভিসার। জিবার্টকে ক্রিমিনাল রেকর্ড থাকার কারণে ভিসা দেয়নি জার্মানি। অন্যদিকে ভারতীয় ভিসার জন্যেও আবেদন করেননি তিনি।

বিমানবন্দর সূত্রে খবর, খবরের কাগজ পড়ে আর বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে ৫৪ দিন কাটিয়ে দিয়েছেন জিবার্ট। সে বিমানবন্দরের শৌচালয়ই ব্যবহার করেন। বিমানবন্দরে যে সামান্য দোকান খোলা আছে সেখান থেকেই খাবার কিনে খান। তাঁকে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে ব্রাশ, টুথপেস্টের মত নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। চেয়ার বা মেঝেতে শুয়েই রাত কাটিয়ে দিচ্ছেন তিনি। আন্তর্জাতিক বিমান চলাতল বন্ধ থাকায় আপাততা ট্রানজিট এলাকাতে একাই রয়েছেন জিবার্ট।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে টার্কি যাওয়ার কোনও বিমানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন জিবার্ট। দিতে রাজি আছেন টিকিটের টাকাও। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে গোটা পৃথিবীর বিমান চলাচল বিশাল ধাক্কা খাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।