শ্রীনগর: নোট বাতিলের জেরে ফের মৃত্যু। এবার অসু্স্থ ছেলেকে কাঁধে তুলে দীর্ঘ ৩০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়েও বাঁচাতে পারলেন না বাবা। ঘটনাস্থল জম্মু ও কাশ্মীর।
ঘটনায় প্রকাশ, যাযাবর বকরওয়াল সম্প্রদায়ভুক্ত ২৮ বছরের মহম্মদ হারুন পেশায় পশুপালক। অর্থের অনটন সত্ত্বেও নিজের আট বছরের ছেলে মুনীর অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা দেন।
এর জন্য বালককে নিজের কাঁধে তুলে ডুঙ্গা গ্রাম থেকে সাম্বা জেলার দূর্গম পার্বত্য ও জঙ্গলে ঘেরা অঞ্চল পেরিয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে নিকটতম স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছন হারুন।
কিন্তু, ততক্ষণে বালকের প্রাণ তার দেহ থেকে চলে গিয়েছে। জানা গিয়েছে, গত ১৪ তারিখ অসুস্থ হয় মুনীর। পরের তিনদিন ধরে ছেলের চিকিৎসার জন্য হাতে থাকা প্রায় ২৯ হাজার টাকা পুরনো নোট বদল করতে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে ছোটেন তিনি। কিন্তু, কোথাও নোট বদল করতে পারেননি।
অভিযোগ, কুন এবং রামকোটের দুটি ব্যাঙ্কেই পৌঁছে দেখেন সেখানে লম্বা লাইন রয়েছে। হারুনের নম্বর আসার আগেই সেখানকার টাকা ফুরিয়ে যায়। ব্যাঙ্ক ম্যানেজারদের দাবি, হারুন যদি নিজের অবস্থার কথা একবার জানাতেন, তাহলে তাঁরা আগে বন্দোবস্ত করে রাখতেন।
এদিকে, অচল নোট নিয়ে ছেলেকে সঙ্গে করে ৩০ কিলোমিটার দূরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উদ্দেশে পাড়ি দেন হারুন-দম্পতি। প্রথমে ৯ কিলোমিটার হাঁটার পর এক ট্রাকচালকের সঙ্গে বাকি পথ যাওয়ার রফা করেন।
কিন্তু, পুরনো নোট নিতে অস্বীকার করায় কুন হাইওয়ের ওপর আটকে পড়েন তাঁরা। এরপর জঙ্গলের মধ্য দিয়ে বিকল্প রাস্তায় যাওয়া মনস্থির করেন হারুন। কিন্তু মনসরে পৌঁছনোর আগেই শুক্রবার রাতে মারা যায় মুনীর।
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় প্রশাসন। ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হারুনের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। সাম্বার জেলাশাসক গোটা ঘটনার রিপোর্ট তলব করেছেন। জানা গিয়েছে, ছোট মুনীর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল।
এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, নোট বাতিলের ফলে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের বকরবল ও গুজ্জর সম্প্রদায়। কারণ, প্রথমত, তারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষা ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের অভাবের কারণে তারা বহু সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।