নয়াদিল্লি: কর্মসূত্রে ইরাকে গিয়ে মসুল শহরে তিন বছর আগে অপহৃত ৩৯ ভারতীয় মারা গিয়েছেন বলে জোরালো প্রমাণ নেই। সংসদে জানালেন সুষমা স্বরাজ। বিদেশমন্ত্রী লোকসভায় বুধবার এ নিয়ে জোরালো ভাষায় নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, কোনও তথ্যপ্রমাণ হাতে না পেয়েই ওঁরা মারা গিয়েছেন বলে দেওয়াটা পাপ হবে, আমি তা করতে পারব না।

সুষমা বলেন, ওঁরা বেঁচে নেই, এমন প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত বর্তমান সরকার নিখোঁজ নাগরিকদের অনুসন্ধান বন্ধ করে দেবে না। ওঁদের ফাইল বন্ধ হবে না।

সুষমা এ ব্যাপারে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগও খারিজ করে দেন। যাঁরা বলছেন, নিখোঁজদের সম্পর্কে তিনি 'মিথ্যা বলছেন', বা 'সত্য গোপন করে যাচ্ছেন', তাঁরা ভুল বলে দাবি করেন। তাঁর বক্তব্য, কখনই আমি বিভ্রান্তি ছড়াইনি। বিরোধীদের কাছে জানতে চাই, বিভ্রান্তি ছড়িয়ে আমার, সরকারের লাভটা কী! আমার পক্ষে বলে দেওয়া সহজ যে, ৩৯ জন ভারতীয় মৃত। বলে দিলে তারপর ওঁদের পরিবার সহ কেউ আমায় কোনও প্রশ্ন করবেন না। কিন্তু তিনি তা করবেন না বলে জানিয়ে দেন বিদেশমন্ত্রী।

নিজের বক্তব্যের সমর্থনে ভিয়েতনাম যুদ্ধের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভিয়েতনাম আজও ওই যুদ্ধে নিখোঁজ বা মৃত বলে মনে করা সৈনিকদের খোঁজ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিখোঁজ সেনা জওয়ানদের খুঁজছে আমেরিকাও।

দুদিন আগেই ইরাকি বিদেশমন্ত্রী ইব্রাহিম আল-জাফরি জানান, ওই ভারতীয়রা বেঁচে আছেন না মারা গিয়েছেন, সে ব্যাপারে কোনও পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ মেলেনি। তাঁরা যে বাদুশা জেলে ছিলেন বলে শেষ জানা গিয়েছিল, সেটিও সন্ত্রাসবাদী আইসিস গোষ্ঠীর গুঁড়িয়ে দেওয়ার খবর সমর্থন করেন তিনি।

সেই সুরেই সুষমা বলেন, ওঁদের বেঁচে থাকার কোনও প্রমাণ আমাদের কাছে নেই। তবে কোনও মৃতদেহ, রক্তের নমুনা বা আইসিস-এর প্রকাশ করা কোনও তালিকাও মেলেনি যা থেকে ওঁরা মৃত বলে নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে। সুষমা বলেন, ৬টি সূত্র দাবি করেছে, ওই ভারতীয়রা জীবিত। আমার কাছে ওঁদের মারা যাওয়ার প্রমাণ নেই। ফলে আমি মৃত বলব না, যদি বলে দেওয়ার পর দেখা যায়, একজন বেঁচে আছেন, তখন কী হবে! সরকার নিখোঁজদের সন্ধানে যা করার সব করছে, আরও করবে।

সুষমা বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহের উল্লেখ করে বলেন, ৯ জুলাই মসুল মুক্ত হয়েছে, ঘোষণা হতেই আমি ওনাকে তলব করি। ১০ জুলাই তিনি মসুলের বিমান ধরেন। সেখানে ৪ দিন ছিলেন তিনি।

২০১৪ সালে হরজিত মাসিহ নামে যে লোকটি আইসিস-এর কব্জা থেকে পালিয়েছিল, সে পণবন্দি ৩৯ জন ভারতীয়ই মারা গিয়েছে বলে দাবি করলেও প্রমাণ ছাড়া তা বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই বলে মন্তব্য করেন সুষমা।