কলকাতার একটি বিচ্ছিন্ন পরিবারের নির্যাতিতা ওই শিশুকন্যার বয়স এখন ১০। এখন সে একটি স্কুলে পড়াশোনা করে। মা মারা যাওয়ার পর বাবা তাকে ছেড়ে চলে যায়। তখন তার বয়স বছর দুয়েক। এরপর তার কাকিমা তাকে নিজের কাছে রেখেছিল। অন্য লোকের বাড়িতে কাজে দিয়েছিল কাকিমা। পরিচারিকার কাজ করার পাশাপাশি কাকিমার বাড়িতে দুর্ব্যবহারের সঙ্গে জুটেছিল কাকার ধারাবাহিক অত্যাচার। কাকা নিয়মিত যৌন নিগ্রহ করত তার। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় সে।
ভাইঝির ওপর নির্মম অত্যাচার করেও হয়ত বহাল তবিয়তেই থেকে যেত দুষ্কৃতী। কিন্তু ২০১৪-র নভেম্বরে একটি বাস থেকে উদ্ধার করা হয় ওই নাবালিকাকে। এরপর শিশু কল্যাণ ও সুরক্ষা সংস্থার কাছে পুরো ঘটনা জানায়। তার কাউন্সেলিং করেন এইচএকিউ সেন্টার ফর চাইল্ড কেয়ারের সদস্যরা। তার কথা মিলিয়ে অবশেষে হদিশ মেলে কাকা আখতার আহমেদের। ২০১৬-র জুনে গ্রেফতার করা হয় আখতারকে। আদালতে অভিযুক্তের আইনজীবী দাবি করেন, কাকাকে অভিযুক্ত হিসেবে দেখাতে নাবালিকার ওপর অত্যাচার চালানো হয়েছে। তাই তাকে ‘যোগ্য সাক্ষী’ হিসেবে গন্য করা যাবে না।
আদালতে মামলার শুনানি চলাকালে শিশুকন্যাটিকে ব্যস্ত রাখতে কাগজ ও রঙিন পেন্সিল দেওয়া হয়েছিল। আর তাতেই মিলল প্রমাণ। কাগজে সে এঁকেছে একটি পরিত্যক্ত বাড়ির ছবি, একটা ছোট মেয়ের হাতে সুতোয়া বাঁধা ঘুড়ি, একটা জামা পড়ে রয়েছে মেয়েটির পিছনে। সে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনুজ্জ্বল রঙের পেনসিল ব্যবহার করেছে। অপটু হাতের আঁকা ওই ছবি অতিরিক্ত দায়রা বিচারক বিনোদ যাদব তা ওই নাবালিকার ওপর নির্মম অত্যাচারের প্রতিফলন হিসেবেই বিবেচনা করেন। বিচারক বলেন, ঘটনার প্রেক্ষাপট হিসেবে ছবির বিষয়বস্তুকে যদি বিবেচনা করা যায় তাহলে বোঝা যায় যে, বাড়িতে তাকে নগ্ন করে কেউ যৌন নিগ্রহ করেছিল। সেই ঘটনায় মেয়েটির যন্ত্রণার কথাই ছবিতে ফুটে উঠেছে। সেজন্য মেয়েটিকে উপযুক্ত সাক্ষী হিসেবে গন্য করা হচ্ছে বলে জানান বিচারপতি।
যৌন নিগ্রহে করা হলেও যেহেতু নাবালিকার শরীরে কোনও অঙ্গের অনুপ্রবেশ হয়নি, সেজন্য আদালত দোষীর পাঁচ বছরে কারাদণ্ড এবং নির্যাতিতার কল্যাণ ও পুনর্বাসনের জন্য ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও মেয়েটির নামে তিন লক্ষ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।