নয়াদিল্লি: দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির আশায় জল ঢেলে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফের ক্ষমতায় আসতে চলেছে আম আদমি পার্টি। ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোর ট্যুইট করে দিল্লির জনতাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। গত দুই সপ্তাহ ধরে মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন পিকে। অপেক্ষা করছিলেন আজকের দিনের জন্য। আপের জয়ে যতটা খুশি অরবিন্দ কেজরিবাল, ঠিক ততটাই প্রশান্ত কিশোরও। অনেক কিছুই প্রমাণ করার ছিল তাঁর। আপের জয়ের পর কেজরীবাল ও পিকের আলিঙ্গনাবদ্ধ ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। দিল্লিতে আপের জয়ের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব কেজরিবালের। জল, বিদ্যুত, মহল্লা ক্লিনিক থেকে শুরু করে স্কুল সম্পর্কে আপ সরকারের কাজ  ভোটের মুখে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল। কিন্তু নেপথ্যে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন পিকে।  আপের হয়ে নির্বাচনী কৌশলে পিকে-র দাওয়াই ছিল, বিজেপির হিন্দুত্বর খেলায় যেন পা না পিছলে যায়। আর এক্ষেত্রে দারুণ কাজ করেছে কেজরিবাল-পিকের যুগলবন্দী।


এ জন্যই পাঁচ বছরের সরকারের দুরন্ত কাজ সত্ত্বেও কেজরিবালকে পড়তে হয়েছিল হনুমান চালিশা। বজরংবলীর মন্দিরে গিয়ে পুজোও দিয়েছিলেন তিনি। এবার দিল্লির নির্বাচনে এ যেন এক নতুন কেজরিবাল। এই কেজরিবাল সেই কেজরিবাল নন, যিনি আজান শুনলে ভাষণ থামিয়ে দিতেন।  এবার সম্পূর্ণ নতুন রূপে দেখা গেল তাঁকে। বজরংবলীর ভক্ত।

ধর্ণার রাজনীতির জন্য পরিচিতি গড়ে উঠেছিল কেজরিবালের। কিন্তু শাহিনবাগের চলতি আন্দোলনে যাওয়া তো দূরের কথা, ভোটের প্রচারে শাহিনবাগের নামও মুখে আনেননি আপ প্রধান।

উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ শিসোদিয়ার শাহিনবাগের পাশে আছি সংক্রান্ত মন্তব্যের ধারপাশ দিয়ে ঘেঁষেননি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। আম আদমি পার্টির বৈঠকেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল, শাহিনবাগ নিয়ে কোনও আলোচনা নয়। এরপর দলের ছোট-বড় নেতা এই প্রসঙ্গ এড়িয়েই থেকেছেন। বিজেপির পক্ষ থেকে বারংবার প্ররোচনা সত্ত্বেও সেই ফাঁদে পা দেয়নি টিম কেজরীবাল। শাহিনবাগকে হাতিয়ার করে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের প্রয়াস কার্যত মাঠে মারা গিয়েছে। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ থেকে শুরু করে যোগী আদিত্যনাথ, প্রবেশ ভার্মা, কপিল মিশ্র- বিজেপির একের পর এক নেতা মন্ত্রী শাহিনবাগের আন্দোলন নিয়ে আপকে নিশানা করেছেন। কিন্তু আপ নেতারা সব কিছু এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দিয়েছেন।

আসলে প্রশান্ত কিশোর চাননি যে, কেজরীবাল গেরুয়া পিচে ব্যাটিং করুন। আপের যে নেতাদের কারণে এই পরিস্থিতির বদল ঘটতে পারত, তাঁদের সম্পূর্ণ সাইলেন্ট মোডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আমানাতুল্লা খান ও শোয়েব ইকবালের মতো নেতাদের মুখবন্ধ রাখতে বলা হয়। লক্ষ্য ছিল একটাই, মেরুকরণের খাতে যেন জল না গড়ায়।

দিল্লির মতো পাঁচ বছর আগে বিহারে ভোট হয়েছিল। লালু প্রসাদ যাদব ও নীতীশ কুমার জুটির সরাসরি টক্কর ছিল সরাসরি বিজেপির সঙ্গে। তখন লালু-নীতীশ শিবিরের সঙ্গে ছিলেন পিকে। সেইসময়ও বিজেপির পক্ষ থেকে ভোটের প্রচারে হিন্দুস্তান ও পাকিস্তানের মতো বিষয় উঠে আসত। বিজেপির পক্ষ থেকে প্রচারে বলা হয়েছিল, বিহারে বিজেপি হারলে পাকিস্তান বাজি পুড়বে। কিন্তু তখন নীতীশ ও লালু সামাজিক ন্যায়ের অ্যাজেন্ডাকেই আস্থা রেখেছিলেন। দুই দলেরই প্রচার থেকে মুসলিম নেতাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তাঁদের বলে দেওয়া হয়েছিল, এমন কোনও মন্তব্য না করতে যাতে মেরুকরণের  ইস্যু উস্কে না ওঠে। এই রণ কৌশলও ছিল পিকে-রই। সেই কৌশল কাজ দিয়েছিল। এবার একই ফর্মুলায় সাফল্য দিল্লির ভোটেও। পদ্মশিবিরকে পর্যুদস্ত করে দিল্লিতে আগের বারের মতোই ‘পহেলে আপ’।