নোট বাতিল নিয়ে যখন একজোট বিরোধীদের আক্রমণে সংসদ উত্তাল, তখন পরবর্তী কৌশল ও পদক্ষেপ স্থির করতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
জানা গিয়েছে, সঙ্গতিহীন আয়ের ওপর ২০০ শতাংশ জরিমানার যে ধারা জারি করেছে কেন্দ্র, তার পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে । আয়করে জরিমানার ভয়ে অনেকেই বিপুল পরিমাণ বাতিল নোট ব্যাঙ্কে গিয়ে জমা করেননি। বহু জায়গা থেকে টাকা ছিঁড়ে ও পুড়িয়ে ফেলার খবর মিলেছে। কেন্দ্রীয় সূত্রের খবর, সরকার চায় নোটগুলি যাতে ব্যাঙ্কে জমা পড়ুক।
প্রসঙ্গত, আয়কর দফতর আগে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, আড়াই লক্ষ টাকার ওপর নগদ ব্যাঙ্কে জমা পড়লে, তার ওপর নজর রাখবে দফতর। সেক্ষেত্রে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আয়ের সঙ্গে জমার হিসেবে গরমিল থাকলে, ২০০ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে। এই ভয়ে বহু মানুষ নিজেদের টাকা নষ্ট করে ফেলে বলে খবর।
গত ৮ তারিখ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটি সিদ্ধান্ত বাজারে চালু প্রায় ৮৬ শতাংশ নোটকে অচল করে দেয়। কেন্দ্রের এক ধাক্কায় অচল হয়ে পড়ে প্রায় ১৪ লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু, এর ঝড় আছড়ে পড়ে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে।
নোট বাতিলকে কেন্দ্র করে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে শীতকালীন অধিবেশনে। বিরোধীরা ক্রমাগত চাপসৃষ্টি করছে মোদী সরকারের ওপর। কখনও বিরোধীরা দাবি তুলেছে সিদ্ধান্ত বাতিল করার। তো কোথাও দাবি উঠেছে, ভোটাভুটি সহ সংসদে বিতর্ক শুরু করার। যদিও, বিরোধীদের সব দাবি পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছে বিজেপি-শাসিত কেন্দ্রীয় সরকার।
কিন্তু, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নোট বাতিলের ধাক্কায় পরিষেবা স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হওয়ার যে খবর আসছে, তাতে একদিকে সরকার যেমন বিব্রত হচ্ছে, তেমনই বিরোধীদের হাতে নতুন নতুন অস্ত্র তুলে দিচ্ছে।
যেমনটা ছিল বৃহস্পতিবার। অন্যান্য দিনের মতো এদিনও নোট বাতিল ইস্যুতে উত্তাল ছিল সংসদ। মোদী সরকারকে একজোট হয়ে আক্রমণ করেন বিরোধীরা। যার জেরে দফায় দফায় মুলতুবি হয় লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশন।
এদিন সভার শুরুতেই কক্ষের সেক্রেটারি জেনারেলের সামনে রাখা কাগজ ছিঁড়ে লোকসভার অধ্যক্ষকে লক্ষ্য করে ছোঁড়েন সমাজবাদী পার্টির সাংসদ অক্ষয় যাদব। এর জন্য তাঁকে সতর্ক করেন স্পিকার সুমিত্রা মহাজন।
এরপর তুমুল হৈ-হট্টগোলে বেলা ১২টা পর্যন্ত স্থগিত হয়ে যায় লোকসভার অধিবেশন। এরপর সভা শুরু হলেও, ফের গণ্ডগোল শুরু হয়। বিরোধীরা এ দিনও সমস্ত বিষয় মুলতুবি রেখে নোট ইস্যুতে আলোচনা ও ভোটাভুটির দাবি তোলে।
কিন্তু তা খারিজ করে দেন অধ্যক্ষ। প্রতিবাদে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভে দেখান বিরোধী সাংসদরা। যার জেরে এ দিনের মতো মুলতুবি হয়ে যায় লোকসভার অধিবেশন।
অন্যদিকে, বিরোধীদের লাগাতার চাপের মুখে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী রাজ্যসভায় উপস্থিত হওয়ায় আলোচনা শুরু হয়। অরুণ জেটলি জানান, বিতর্কে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
রাজ্যসভায় ডেপুটি চেয়ারম্যান মনমোহন সিংহকে বলতে অনুমতি দেওয়া সত্বেও বাধা দেন অরুণ জেটলি। তিনি বলেন, নোটকাণ্ডে বিতর্ককে স্বাগত জানাচ্ছে সরকার। কিন্তু বিরোধীরা বিতর্ক না চাইলে, তাদের কথা বলতে দেওয়াই উচিত নয়।
এনিয়ে হইচই শুরু হওয়ায় রাজ্যসভার অধিবেশনও বেলা ১২টা পর্যন্ত স্থগিত হয়ে যায়। ফের অধিবেশন শুরু হলে মনমোহন সিংহ বক্তব্য পেশ করেন। এরপর শুরু হয় বিতর্ক।
কিন্তু, মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর মোদী রাজ্যসভায় হাজির না হওয়ায়, বিরোধীরা ফের ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান। যার জেরে এ দিনের মতো মুলতুবি হয়ে যায় উচ্চকক্ষের অধিবেশনও।
এরপর রাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকা হয়। সূত্রের খবর, বৈঠকে যাওয়ার আগে আরবিআই ও অন্যান্য শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্তাদের সঙ্গে একপ্রস্থ আলোচনা সেরে নেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে টাকার জোগানের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হয়েছেন বলে খবর।
তবে, মোদীর এই বৈঠককে ঘিরে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আগ্রহ দেখা যায়। গত ৮ তারিখ রাত আটটায় দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বক্তব্য রেখে পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের ঘোষণা করেছিলেন মোদী।