নয়াদিল্লি: ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল কালো টাকা উদ্ধার। এরপর থেকে বিভিন্ন মহল থেকে যে হিসেব উঠে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে, কালো টাকার পরিমাণ ৩ থেকে ৫ লক্ষ কোটি টাকা হতে পারে। এই অঙ্কের টাকা ব্যাঙ্কগুলিতে জমা পড়বে না বলেই অনুমান। অর্থাত্, ওই অবৈধভাবে সঞ্চিত টাকা দেশের অর্থনীতি থেকে ছেঁটে ফেলা যাবে বলে আশা।
কিন্তু ব্যাঙ্কে বাতিল নোট জমা পড়ার প্রবণতা ও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে করা হচ্ছে,  কালো টাকা ছেঁটে ফেলার পরিমাণ প্রত্যাশার থেকে অনেকটাই কম হতে পারে।
গত মঙ্গলবার রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় অর্থপ্রতিমন্ত্রী অর্জুন রান মেঘাওয়াল জানিয়েছিলেন যে, গত ৮ নভেম্বর বাজারে চালু ছিল ১৭,১৬৫ মিলিয়ন পিস ৫০০ টাকার নোট এবং ৬,৮৬৮ মিলিয়ন পিস ১০০০ টাকার নোট। সবমিলিয়ে ৫০০ ও ১০০০ টাকায় ছিল মোট ১৫.৪৪ লক্ষ কোটি টাকা। (৫০০ টাকার নোটে ৮.৫৮ লক্ষ কোটি টাকা এবং ১০০০ টাকার নোটে ৬.৮৬ কোটি টাকা।
গত ২৮ নভেম্বর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) জানিয়েছে যে, ১০ নভেম্বর থেকে ২৭ নভম্বর সময় পর্যন্ত বাতিল নোটে ৮.৪৫ লক্ষ কোটি (৮,৪৪,৯৬২ কোটি)  টাকা ব্যাঙ্কগুলিতে জমা পড়েছে। উল্লেখ্য, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর ৯ নভেম্বর ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিল। ৫০০ ও ১০০০ টাকার পুরানো নোট ৫০ দিনের মধ্যে ব্যাঙ্কগুলিতে গ্রাহকরা জমা দিতে পারবেন বলে কেন্দ্র জানিয়েছিল। কাজেই নোট বাতিলের প্রথম ১৮ দিনেই ৮.৫০ লক্ষ কোটি টাকা জমা পড়েছে। এটাও ঠিক, ব্যাঙ্কগুলিতে প্রচুর ভিড়ের জন্য অনেক গ্রাহকই তাঁদের কাছে থাকা বাতিল নোট এখনও জমা দিতে পারেননি।
এছাড়াও বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে তাদের কাছে জমা পড়া অর্থের একটা নির্দিষ্ট অংশ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) হিসেবে জমা রাখতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের উইকলি বুলেটিন অনুসারে, গত ৮ নভেম্বর সিআরআর হিসেবে আরবিআই-র কাছে থাকা নগদের পরিমাণ ছিল ৪.০৬ লক্ষ কোটি (৪,০৬,৯০০ কোটি) টাকা। ব্যাঙ্কারদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই নগদের বেশিরভাগই ছিল ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটে।
এছাডাও দৈনন্দিন কাজ চালাতে ও গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী অর্থের জোগান দিতে ব্যাঙ্কগুলিকে কিছু নগদ রাখতে হয়। আরবিআই-এর তথ্য অনুযায়ী, ব্যাঙ্কগুলির গড় ক্যাশ-টু-রিজার্ভ রেশিও ৪.৬৯। ৮ নভেম্বরে এর চার শতাংশ (৪.০৬ লক্ষ কোটি টাকা) যদি সিআরআর হিসেবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে যায় তাহলে ব্যাঙ্কগুলির কাছে গড়ে নগদ থাকা অর্থের পরিমাণ ৭০ হাজার টাকা। এই টাকার মধ্য অবশ্য  নিশ্চিত ভাবেই সব ধরনের নোটই রয়েছে।
সব মিলিয়ে প্রথম ২০ দিনে যত টাকা জমা পড়েছে তার সঙ্গে সিআরআর যোগ করলে মোট হয় ১২.৫০ লক্ষ কোটি টাকা। এরসঙ্গে ব্যাঙ্কগুলির কাছে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা হলেও সবমিলিয়ে হচ্ছে ১৩ লক্ষ কোটি টাকা।
পুরানো নোট জমা দেওয়ার সময়সীমা শেষ হতে এখনও ৩০ দিন বাকি। যে হারে বাতিল নোট ব্যাঙ্কগুলিতে জমা হচ্ছে, তাতে আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ২ লক্ষ কোটি টাকা বা তার বেশি জমা পড়তে পারে বলে অনুমান। সব মিলিয়ে পুরানো নোটে জমা টাকার পরিমাণ ১৫ লক্ষ কোটি টাকা হতে পারে। অর্থাত্ অনুমানের তুলনায় অনেক কম নোটই ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের বাইরে থেকে যেতে পারে।
এর অর্থ, হয় কালো টাকা উচ্চ মূল্যের নোটে ছিল না, অথবা এ ধরনের টাকা ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্কিং সিস্টেমে রাখা হয়ে গিয়েছে।