নয়াদিল্লি: এক বছর আগে ৮ নভেম্বর ভারতের আর্থিক ক্ষেত্রে আলোড়ন ঘটিয়ে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই নাটকীয় সিদ্ধান্তের লক্ষ্য হিসেবে কালো টাকা ধ্বংস, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ও জাল নোটের বাড়বাড়ন্ত রোখার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।


এক বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু কতটা হল লক্ষ্যপূরণ?

শুরু করা যাক কালো টাকা থেকে। প্রাথমিকভাবে সরকার জানিয়েছিল যে, বাতিল নোটের একটা বড় অংশই আর ব্যাঙ্কিং সিস্টেমে ফিরবে না। যত পরিমাণ নোট ফিরবে না, সেটাই হবে কালো টাকা। সেই কালো টাকা ধ্বংস হয়ে যাবে। গত বছরের নভেম্বরে তত্কালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি সুপ্রিম কোর্টকে বলেছিলেন, মোটামুটি হিসেব অনুযায়ী ৪ থেকে ৫ লক্ষ কোটি টাকা বা বাতিল নোটের মোট মূল্য ১৫.৪৪ লক্ষ টাকার ২৫ শতাংশ আর ব্যাঙ্কিং সিস্টেমে ফিরবে না।

কিন্তু চলতি বছর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে তথ্য দিল তাতে জানা গিয়েছে যে মাত্র ১ শতাংশ বাতিল নোট ফিরে আসেনি।

কেন্দ্র বলে যে, বেআইনি নগদ যারা রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক হানা চালানো হয়েছে। এতে ১,০০৩ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত হয়েছে এবং অঘোষিত আয় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ১৭,৫২৬ কোটি টাকা।

৩৫ হাজার ভুয়ো কোম্পানির অ্যাকাউন্টগুলিতে জমা করা ১৭,০০০ কোটি টাকার হিসেবও খতিয়ে দেখার কথা জানানো হয়।

কিন্তু সব মিলিয়ে তো ওই অঙ্ক মোট বাতিল নোটের মাত্র ২ শতাংশের সামান্য বেশি। বিগত বছরগুলিতে চিহ্নিত অঘোষিত নগদের পরিমাণ এর থেকে বেশি। সিএজি-র একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১২-১৩ তে এর পরিমাণ ছিল ১৯,৩৩৭ কোটি টাকা, ২০১৩-১৪ তে ৯০,৩৯১ কোটি টাকা।

সরকার অবশ্য বলেছে, ব্যাঙ্কে ফিরেছে বলে যে সব টাকা সাদা তা নয়। সন্দেহেজনক লেনদেনগুলি খতিয়ে দেখা হবে।

এ ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান দিয়ে বলা হয়, আয়কর বিভাগ নোটবাতিলের পর্বে ১৩ লক্ষ অ্যাকাউন্টে জমা পড়া ২.৯ লক্ষ কোটি টাকার দিকে নজর রাখছে।

তবে এক্ষেত্রে স্পষ্ট নয় যে, ওই টাকার কতটা অবৈধ এবং কবে নাগাদ তা জানা যাবে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, নোট বাতিলের আগের বছরগুলিতে এর চেয়ে বেশি সন্দেহজনক টাকা নজরদারির আওতায় ছিল। ২০১৩-১৪ তে এর পরিমাণ ছিল ২.৮৭ লক্ষ কোটি টাকা।এর পরের বছর তা বেড়ে হয় ৩.৮৩ কোটি টাকা।২০১৫-১৬ তে এই টাকার পরিমাণ পৌঁছয় ৫.১৬ লক্ষ কোটিতে। সিএজি-র একটি রিপোর্টে এ কথা জানা গেছে।

এবার আসা যাক, জাল নোটের কথায়। গত জুলাইতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সংসদে জানান, নোট বাতিলের পর ১১.২৩ কোটি টাকার জাল নোট পাওয়া গিয়েছে। মোট বাতিল নোটের মূল্যের তা ০.০০০৭ শতাংশ।

২০১৬-১৭ সমগ্র অর্থবর্ষে এর চেয়ে বেশি ৪৩ কোটি টাকা জাল নোট চিহ্নিত হওয়ার কথা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্যে উঠে এসেছে। সবমিলিয়েও তা মোট বাতিল নোটের মূল্যের তা ০.০০০২ শতাংশ।

নোট বাতিলের আগের ১০ মাস ও পরের ১০ মাসে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তথ্য বিশ্লেষণ (সাউথ এশিয়া টেররিজম পোর্টাল বা এসএটিপি সংগৃহীত) অনুযায়ী, জম্মু ও কাশ্মীরে নোট বাতিলের পর সন্ত্রাসবাদী ঘটনার পরিমাণ ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। নিরীহ মানুষের মৃত্যু বেড়েছে ২৫০০ শতাংশ এবং নিরাপত্তা কর্মীদের মৃত্যুর পরিমাণও ২ শতাংশ বেড়েছে।

মাওবাদী অধ্যুষিত রাজ্যগুলিতে নাশকতার পরিমাণ ৪৫ শতাংশ কমেছে। তবে নিরাপত্তা কর্মীর মৃত্যুর পরিমাণ ৮২ শতাংশ বেড়েছে।