মধ্যপ্রদেশে ১৩ বছরের বিজেপি শাসনের অবসান ঘটিয়ে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ক্ষমতায় এসেছিল কংগ্রেস। কিন্তু, ১৫ মাসেই সেই সরকার খাদের কিনারায়! সোমবার থেকেই জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার ঘনিষ্ঠ ১৭ জন কংগ্রেস বিধায়ক উধাও হয়ে গেছিলেন। মঙ্গলবার কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর কাছে ইস্তফা পত্র পাঠান জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া।
তারপরই কংগ্রেস শিবিরে ইস্তফার লাইন পড়ে যায়। একে একে ২২ জন কংগ্রেস বিধায়ক স্পিকারের কাছে ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেন।
ফলে এবার মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস সরকারের পতন অবশ্যম্ভাবী বলেই মনে করছেন সকলে। এই প্রেক্ষাপটে বিজেপির বিরুদ্ধে ঘর ভাঙানোর অভিযোগে সরব হয়েছে কংগ্রেস। পাল্টা কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে বিজেপি-ও। কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রদেশে কমলনাথ সরকার টিকবে না। বিজেপির রাজনীতি এটাই। ভেঙে দাও। ফেলে দাও।
পাল্টা বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভির কটাক্ষ,জোগাড়ের সরকার চলে না। ঘর সামলাতে পারছে না কংগ্রেস।
মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় মোট আসন ২৩০টি। কংগ্রেস এবং বিজেপির একজন করে বিধায়কের মৃত্যুতে দু’টি আসন আগেই খালি হয়। মঙ্গলবার ২২ জন বিধায়ক ইস্তফা দেন।এই মুহূর্তে মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় বিধায়ক সংখ্যা ২০৬।
অর্থাৎ এই মুহূর্তে ম্যাজিক ফিগার ১০৪। ২২ জন বিধায়কের ইস্তফার পর, কংগ্রেসের হাতে স্পিকার সহ ৯২ জন বিধায়ক রয়েছেন। আর বিজেপির হাতে রয়েছেন ১০৭ জন বিধায়ক। এছাড়া মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় ৪ জন নির্দল, এক জন এসপি দু’জন বিএসপির বিধায়ক রয়েছেন।এদিন এসপি এবং বিএসপির দু’জন বিধায়কও শিবরাজ সিং চৌহানের বাড়িতে যান।
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথের বাড়িতে কংগ্রেস বিধায়কদের নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। কিন্তু, কংগ্রেসের সরকার কি বাঁচবে? নেতাদের একাংশের দাবি, তাঁদের হাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যা আছে।
যদিও, কংগ্রেসেরই বিধায়ক তথা মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিংহর ভাই লক্ষ্মণ সিংহ, আশা ছেড়েই দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিরোধী শিবিরে বসতে হবে। পরের ভোটে জিতে আসব। বিরোধী শিবিরে বসার প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
সূত্রের খবর, শীঘ্রই মধ্যপ্রদেশে সরকার গঠনের দাবি জানাবে বিজেপি। মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানকে বিজেপির পরিষদীয় দলের নেতা নির্বাচিত করা হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
জ্যোতিরাদিত্যের এই বিদ্রোহ কংগ্রেসের অন্দরে ঝড় তুলেছে বলে খবর। শীর্ষস্তরে নেতৃত্বের সংকটের মধ্যে এই ঘটনায় ১৩৫ বছরের প্রাচীন দলের অনেকেই অসন্তুষ্ট। দলের কোনও কোনও নেতা মনে করছেন, জ্যোতিরাদিত্য দীর্ঘদিন ধরেই রাহুল গাঁধীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। অসন্তোষ থাকলে তাঁর সঙ্গে কথা বলা দরকার ছিল শীর্ষ নেতৃত্বের। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। এতে দলেরই ক্ষতি হল।এক্ষেত্রে শীর্ষ নেতৃত্ব বলতে তাঁরা গাঁধী পরিবারের দিকেই কার্যত আঙুল তুলেছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। এক নেতার বক্তব্য, শীর্ষ নেতাদের উচিত ছিল জ্যোতিরাদিত্যের বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করা।
দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা কুলদীপ বিষ্ণোইয়ের ট্যুইট- ‘জ্যোতিরাদিত্যের ইস্তফা কংগ্রেসের কাছে একটা বড় ধাক্কা। দলের অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন তিনি। দলে তাঁকে ধরে রাখতে নেতৃত্বের আরও বেশি সচেষ্ট হওয়া উচিত ছিল। তাঁর মতো কংগ্রেসের আরও অনেক নিবেদিত নেতা রয়েছেন, যাঁরা দলে নিজেদের কোণঠাসা মনে করেন’।
কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় ঝা-র কৌশলী ট্যুইটও অনেকের নজর কেড়েছে। তিনি বলেছেন, ‘সবাই নেতা হতে পারেন না’।