সন্ত্রাস নিয়ে অস্বীকার করে দায় এড়ানো যায় না, পাকিস্তানকে বার্তা ভারতের
ওয়েব ডেস্ক, এবিপি আনন্দ | 26 Apr 2016 02:50 AM (IST)
নয়াদিল্লি: সন্ত্রাস বন্ধ না হলে তার প্রভাব পড়তে পারে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে। পাকিস্তানকে এমনই বার্তা দিল ভারত। পঠানকোট হামলার প্রেক্ষিতে স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর এই প্রথম মুখোমুখি হলেন দুদেশের বিদেশ সচিবরা। ভারতের বিদেশসচিব এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দীর্ঘ দেড়-ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন পাক বিদেশসচিব আইজাজ আহমেদ চৌধুরি। সেখানে পঠানকোট হামলা থেকে শুরু করে ২৬/১১ মুম্বই হামলা এবং সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণ ইস্যুগুলি উত্থাপন করা হয়। অন্যদিকে, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তাদের বিদেশ সচিব বৈঠকে কাশ্মীর প্রসঙ্গটি তুলেছেন। 'সিনিয়র অফিসিয়ালস মিটিং অফ দ্য হার্ট অফ এশিয়া-ইস্তানবুল প্রোসেস'-এ যোগ দিতে আজ ভারতে এসেছেন পাক বিদেশ সচিব। তারই ফাঁকে এদিন জয়শঙ্কেরের সঙ্গে বৈঠক সারেন আইজাজ। কেন্দ্রীয় সূত্রের খবর, ভারতের তরফে অবসরপ্রাপ্ত নৌ-অফিসার কুলভূষণ যাদবের ‘অপহরণ’ নিয়েও ইসলামাবাদের কাছে দরবার করে নয়াদিল্লি। ভারত জানায়, তাঁকে অপহরণ করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই অফিসার যাতে কূটনৈতিক সহায়তা পান, তার জন্য পাকিস্তানের কাছে দাবি তোলে ভারত। প্রসঙ্গত, এই প্রথম ভারত স্বীকার করল যে, কুলভূষণকে অপহরণ করা হয়েছে। বৈঠকের পর বিবৃতি পেশ করে কুলভূষণের ‘র’-এজেন্ট হওয়ার দাবি তোলে পাকিস্তান। এই প্রসঙ্গে আইজাজ দাবি করেন, বালোচিস্তানে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা বিভিন্ন কার্যকলাপ চালাচ্ছে। পাকিস্তানের এই অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে ভারত। উল্টে মাসুদ আজহার ইস্যুতে ইসলামাবাদের ওপর চাপসৃষ্টি করে নয়াদিল্লি। পঠানকোট হামলার তদন্ত, মুম্বই হামলার মামলার অগ্রগতি এবং মাসুদ আজহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা নিয়ে পাকিস্তানকে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলে ভারত। জানা গিয়েছে, বৈঠকে এদিন আইজাজের উদ্দেশ্যে জয়শঙ্কর বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর সন্ত্রাসের প্রভাবকে অবজ্ঞা করতে পারে না পাকিস্তান। তিনি আরও জানান, পাকিস্তান থেকে যে সমস্ত জঙ্গি সংগঠনগুলি ভারতকে টার্গেট করার জন্য অপারেট করছে, তাদের অবিলম্বে রুখতে হবে। ভারত জানিয়ে দেয়, সন্ত্রাস-ইস্যুতে অস্বীকার করে পাক প্রশাসন নিজেদের দায় এড়াতে পারে না। একইভাবে, পাক প্রশাসনের হাতে আটক ভারতীয় মৎস্যজীবীদের নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন জয়শঙ্কর। অন্যদিকে, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ক্ষেত্রে কাশ্মীরই প্রধান ইস্যু এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাব ও কাশ্মীরী জনগনের আকাঙ্খার ভিত্তিতে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। আইজাজ বলেন, পাক প্রধানমন্ত্রী সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চান। পাশাপাশি, সমঝোতা এক্সপ্রেসে অভিযুক্তেদের রেহাই নিয়ে ভারতের ভূমিকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ইসলামাবাদ। তবে, যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আলোচনা ইতিবাচক হয়েছে। দুপক্ষই একে কঅপরের সামনে নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরেছে। যা ভবিষ্যৎ বৈঠকের পথ সুগম করবে বলেও আশা প্রকাশ করা হয়েছে। পাক হাই কমিশনের তরফে পরে জানানো হয়, উভয় পক্ষই কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজার্স (সিবিএম) বা দ্বিপাক্ষিক আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ গ্রহণ করার দিকে এগোচ্ছে। উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বরে ইসলামাবাদে ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সার্বিক দ্বিপাক্ষিক আলোচনা প্রক্রিয়া শুরু করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু পাঠানকোটে হামলার পর জানুয়ারিতে দুই দেশের প্রস্তাবিত বিদেশ সচিব পর্যায়ের বৈঠক স্থগিত হয়ে যায়। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য পাকিস্তানের ওপর ক্রমাগত চাপসৃষ্টি করে ভারত। নয়াদিল্লি জানায়, পাকিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদের জঙ্গিরা এই হামলা চালিয়েছে। বৈঠকের জন্য গত ১৫ জানুয়ারি ইসলামাবাদে যাওয়ার কথা ছিল জয়শঙ্করের। কিন্তু পারস্পরিক সহমতের ভিত্তিতে দুই দেশই আলোচনা আপাতত স্থগিত রাখার ঘোষণা করেছিল। সম্প্রতি ভারতে নিযুক্ত পাক হাই কমিশনার আব্দুল বাসিত মন্তব্য করেন, দ্বিপাক্ষিক শান্তি প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে গিয়েছে। তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধে। এই বিতর্কের মধ্যেই বৈঠক করলেন দুই দেশের বিদেশ সচিবরা। ভারত বরাবরই বলে এসেছে, পাকিস্তানের সঙ্গে বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ বজায় রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, আলোচনা শুরু হওয়ার আগে সন্ত্রাসবাদী ও পাঠানকোট হামলার বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে পাকিস্তানকে। এর আগে গত মার্চে নেপালের পোখারাতে সার্ক-ভুক্ত দেশগুলির বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকের ফাঁকে দুই দেশের বিদেশ সচিবের মধ্যে ঘরোয়া কথাবার্তা হয়েছিল। তারপরই এদিনের সরকারি বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠকে গেল ভারত ও পাকিস্তান।