নয়াদিল্লি:  বৃহৎ আন্তর্জাতিক সোনাপাচার চক্র ফাঁস করল কেন্দ্রীয় সংস্থা ডিরেক্টরেট অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স (ডিআরআই)।

ওই চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা গত দু বছরে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার সোনা পাচার করেছে, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ২ হাজার কোটি টাকার বেশি।

কেন্দ্রীয় সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, ওই পাচার চক্রটি মূলত মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে অপারেট করত। মণিপুরের মোরেহ এবং মিজোরামের জোকাতবর লাগোয়া মায়ানমার দিয়ে বিদেশ থেকে সোনা ভারতে প্রবেশ করত।

কিন্তু কী করে ওই সোনা পাচার করত চক্রটি? ডিআরআই সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারতে ঢুকে সোনাকে বিমানের মাধ্যমে দিল্লি সহ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিত। এর জন্য সোনাকে ‘বহুমূল্য সামগ্রী’-র তকমা দিত পাচারকারীরা।

গোয়েন্দাদের মতে, ওই অঞ্চলটি অত্যন্ত দূর্গম। তারই সুযোগ নিয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর চোখে ফাঁকি দিয়ে সোনা এদেশে ঢুকিয়ে দিত পাচারকারীরা।

তা সত্বেও, গত বছরের মার্চ মাসে শিলিগুড়িতে ৮৭ কেজি এবং এবছরের অগাস্ট মাসে কলকাতা বিমানবন্দরে ৫৮ কেজি সোনা বাজেয়াপ্ত করে ডিআরআই।

অন্যদিকে, গতমাসে মুম্বইতে ১২ কেজি সোনা বাজেয়াপ্ত করা হয়। তখন গোয়েন্দারা জানতে পারেন, গত দেড় বছরে ওই একই চক্র ২০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের প্রায় ৭০০ কেজি সোনা পাচার করেছে।



কী করে চক্র ফাঁস হল? সম্প্রতি ডিআরআই-এর দিল্লি জোনাল ইউনিটের আধিকারিকরা বিমানবন্দরের আন্তর্দেশীয় কার্গো টার্মিনাল থেকে ১০ কিলোগ্রাম সোনা বাজেয়াপ্ত করে।

তদন্তে উঠে আসে ২৪ ক্যারাটের ওই সোনা মায়ানমার থেকে ভারতে এনে গুয়াহাটি থেকে দিল্লি নিয়ে আসা হয়। তদন্তকারীদের অনুমান, ওই সোনার বাজারদর প্রায় ৩.১ কোটি টাকা।

এরপরই নড়েচড়ে বসে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এই ঘটনায় গুয়াহাটির এক ব্যবসায়ী এবং তার দিল্লির এক সহযোগীকে গ্রেফতার করে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, জেরায় ধৃতরা স্বীকার করেছে এভাবে ৬৭১ বার গুয়াহাটি থেকে দিল্লি বিমানে করে সোনা পাচার করেছে তারা।

ধৃতদের জেরা করে যে তথ্য জানা গিয়েছে, তাতে গোয়েন্দাদের চোখ কপালে ওঠার জোগাড়।

জানা গিয়েছে, গত আড়াই বছর ধরে তারা এই পাচার করে চলেছে। এই সময়ে প্রায় ৭ হাজার কিলোগ্রাম সোনা ইতিমধ্যেই পাচার হয়ে গিয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ২ হাজার টাকার ওপর।

গোয়েন্দাদের দাবি, গুয়াহাটির ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে একাধিক সোনা পাচারের মামলা চলছে। অতীতে, ৯ কোটি মূল্যের প্রায় ৩৭ কেজি সোনা পাচার মামলাতেও উঠে এসেছিল ওই ব্যবসায়ীর নাম।

পাশাপাশি, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১২ কেজি সোনা পাচারের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করেছিল গুয়াহাটি ডিআরআই। কিন্তু, সেই সময় জামিনে ছাড়া পান তিনি।

ডিআরআই-এর দাবি, সম্ভবত দেশের সর্ববৃহৎ একক পাচার চক্রের হদিস মিলল।