নয়াদিল্লি: ভারতে ১ কোটির বেশি মানুষ করোনা সংক্রমিত হয়েছেন, প্রাণ হারিয়েছেন দেড়লাখ। ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া বা DGCI সীমিতভাবে জরুরি ব্যবহারের জন্য অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড ও ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনকে ছাড়পত্র দিয়েছে। ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া ভিজি সোমানি আশ্বস্ত করেছেন, এমন কোনও কিছুকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে না, যাতে ন্যূনতম বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। টিকাদুটি ১১০ শতাংশ নিরাপদ। হালকা জ্বর, গায়ে ব্যথা ও অ্যালার্জির মত সামান্য অস্বস্তি, যা যে কোনও টিকার ক্ষেত্রে দেখা যায়, তেমনই হতে পারে।

কোভিশিল্ড, কোভ্যাক্সিনের পাশাপাশি DGCI ক্যাডিলা হেলথকেয়ার লিমিটেডকেও তাদের ZyCoV-D টিকার মানব শরীরে তৃতীয় দফা পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সবুজ সংকেত দিয়েছে। আগামী কয়েক সপ্তাহে এ দেশে ছাড়পত্র পেতে পারে ফাইজার ও রাশিয়ার Sputnik-V। কেন্দ্র ঠিক করেছে, বিশ্বের বৃহত্তম টিকাকরণ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে, প্রথমে টিকা দেওয়া হবে প্রায় ৩ কোটি স্বাস্থ্যকর্মী ও সামনের সারিতে থেকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করা মানুষদের। প্রথম পর্যায়ে টিকা পাবেন বয়স্করাও, যাঁদের কোমর্বিডিটি রয়েছে।

ব্রিটেন, আর্জেন্টিনা ও এল সালভাডোরের পর ভারত চতুর্থ দেশ যারা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিশিল্ড টিকায় অনুমোদন দিয়েছে। দেশে এটি তৈরি করছে পুনের সেরাম ইনস্টিটিউট। এরই মধ্যে সেরাম ৫ কোটি কোভিশিল্ড ডোজ মজুত করেছে, মাসে ৫-৬ কোটি টিকার ডোজ তৈরির ক্ষমতা রয়েছে তাদের। টিকাটি তৈরি হয়েছে সাধারণ ঠান্ডা লাগার অ্যাডেনোভাইরাস থেকে, যা শিম্পাঞ্জিদের প্রচলিত অসুখ।

ড্রাগস কন্ট্রোলার অফ ইন্ডিয়া ভিজি সোমানি বলেছেন, এই টিকার কার্যকারিতা ৭০.৪২ শতাংশ, ফাইজার ও মডার্নার থেকে অনেক কম, তবে অনেক রেগুলেটরেরই চাহিদা ৫০ শতাংশ কার্যকারিতার অনেক বেশি।

ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন তৈরি হয়েছে করোনাভাইরাসের মৃত কণিকা ব্যবহার করে, যাতে তারা আবার মানব শরীরে সংক্রমণ ছড়াতে না পারে। এই কণিকা নির্দিষ্ট পরিমাণে মানব শরীরে প্রবেশ করালে মৃত ভাইরাস থেকে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে, তৈরি হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। দেশে এখনও এর শেষ পর্যায়ের পরীক্ষা চলছে, কার্যকারিতার শতাংশ প্রকাশ্যে আনা যায়নি এখনও। ভিজি সোমানি বলেছেন, কোভ্যাক্সিনের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা হয়েছে ৮০০ জনের ওপর। ফলে দেখা যাচ্ছে এটি নিরাপদ, শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করছে শরীরে। ভারতে ২৫,৮০০ জন স্বেচ্ছাসেবীর ওপর চলছে তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা, এখনও পর্যন্ত ২২,৫০০ জন গোটা দেশে এই টিকা পেয়েছেন। দেখা গিয়েছে, টিকাটি নিরাপদ।

২টি ডোজে দেওয়া হবে এই টিকা, রাখতে হবে ২০৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। দুটি ডোজের মধ্যে কতদিন ফারাক থাকবে তা DGCI এখনও জানায়নি, তবে ভারত বায়োটেক আগেই বলেছে, দ্বিতীয় ডোজের ১৪দিন পর থেকে বোঝা যাবে, টিকায় কাজ হল কিনা।

শোনা যাচ্ছে, এই টিকার দাম হবে ৩৫০ টাকা। আমেরিকার বাজারে কোভ্যাক্সিন ছাড়ার জন্যও অকুজেনের সঙ্গে ভারত বায়োটেক লেটার অফ ইনটেন্ট স্বাক্ষর করেছে।

এছাড়া রয়েছে জাইডাস ক্যাডিলার ZyCov-D টিকা। ৩০,০০০ স্বেচ্ছাসেবীর ওপর এটির তৃতীয় দফা প্রয়োগের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এটি প্লাসমিড ডিএনএ টিকা, তৈরি হয়েছে এক ধরনের ডিএনএ মডিউল প্লাসমিডস থেকে। শরীরে ডিএনএ সিকোয়েন্স ইনজেক্ট করলে তা ভাইরাসের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি তৈরি করবে।

গত মাসে জাইডাস ক্যাডিলা জানিয়েছে, তাদের টিকা নিরাপদ, এতে শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা নেই, প্রথম ও দ্বিতীয় ট্রায়ালে ১,০০০ স্বেচ্ছাসেবীর ওপর পরীক্ষাতেই তা প্রমাণিত হয়েছে।