নয়াদিল্লি: মঙ্গলবার প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের ট্রাক্টর মিছিল কর্মসূচি শুরুর আগেই প্রবল অশান্তি, হিংসাত্মক ঘটনায় অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে রাজধানী। লাঠি, কাঁদানে গ্যাস চলে। জখম হন বহু পুলিশকর্মী। ট্রাক্টর উল্টে মারা যান এক কৃষক। শুধু তা-ই নয়, লালকেল্লায় ঢুকে যেখানে জাতীয় পতাকা তোলা হয়, সেখানে শিখদের ধর্মীয় পতাকা লাগিয়ে দেওয়া হয়।
তারপরই দেশজুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে যে প্রশ্নটি, তা হল, কনকনে ঠান্ডা, প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও গত প্রায় দু’মাস ধরে দিল্লির সিঙ্ঘু-সহ বিভিন্ন সীমানায় আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন যে কৃষকরা, তাদের একাংশ হঠাৎ কেন এরকম মারমুখী হয়ে উঠলেন? নেপথ্যে কি কারও ইন্ধন রয়েছে? এই প্রেক্ষাপটে একটি নাম বারবার উঠে আসছে। দীপ সিধু!
কে এই দীপ সিধু? তাঁর পরিচয়, তিনি পাঞ্জাবি গায়ক ও অভিনেতা। তবে তাঁকে নিয়ে কাটাছেড়া হতেই উঠে আসছে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া কিছু ছবি। যেমন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের ট্যুইটে দেখা যাচ্ছে, কোনও অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একপাশে পাঞ্জাবের গুরুদাসপুরের বিজেপি সাংসদ সানি দেওল, আরেক পাশে দীপ। ভাইরাল হওয়া আরেকটি ছবিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বসে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে লালকেল্লায় তাণ্ডবের ঘটনায় উস্কানি দেওয়ায় অভিযুক্ত দীপকে।




আর এই দু’টি ছবি ভাইরাল হওয়ার পরই বিরোধীদের আক্রমণের মুখে কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপি। কৃষক নেতা হান্নান মোল্লার দাবি, কৃষক আন্দোলনকে বদনাম করতেই লালকেল্লায় তাণ্ডব চালানোর জন্য দীপকে কাজে লাগিয়েছে বিজেপি। তাণ্ডবের সময় লালকেল্লায় উপস্থিত ছিলেন দীপ। নিজেই সোশাল মিডিয়ায় লাইভ করছিলেন তিনি।

২০১৯ সাল থেকে দীপকে দেখা যায় রাজনীতির অঙিনায়। গত লোকসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থী সানি দেওলের প্রচারসঙ্গী ছিলেন তিনি। প্রায় সব জায়গাতেই সানির সঙ্গে তাঁকে দেখা যেত। এই প্রেক্ষাপটে একটি পুরনো ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দীপকে নিজের ছোট ভাই বলে সম্বোধন করছেন বিজেপি সাংসদ। আরও একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে সানি-র হয়ে দীপকে প্রচার করতে দেখা যাচ্ছে।
আর লালকেল্লায় তাণ্ডবে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগের পর দীপের সঙ্গে মোদি ও শাহের দু’টি ছবি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। দীপের দিকে আঙুল তুলে এক আন্দোলনকারী কৃষককেও বলতে শোনা গিয়েছে, আমরা আগেই পুলিশকে জানিয়েছিলাম, দীপ খারাপ কাজ করবে। ও আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে ছিল না। কিন্তু পুলিশ কেনও পদক্ষেপ করেনি। দীপ-মোদি ছবির প্রসঙ্গ তুলে কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার দাবি, শাহ পদত্যাগ করুন। দীপ সিধু উস্কেছে। এনআইএ তদন্ত করে, দেশদ্রোহের মামলা করুক, বলেছেন কংগ্রেস এমপি রণভীত সিংহ বিট্টু।
লালকেল্লার তাণ্ডবে দীপের নাম জড়ানোর পর সানি দেওল ট্যুইট করে দাবি করেছেন,লালকেল্লায় যা ঘটেছে, তা দেখে মন ভারাক্রান্ত। আমি গত ৬ ডিসেম্বর ট্যুইটারের মাধ্যমে এটা স্পষ্ট করে দিয়েছিলাম যে, দীপ সিধুর সঙ্গে আমার বা আমার পরিবারের কোনও সম্পর্ক নেই। জয়হিন্দ।
উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দীপ নিজেও।
কিন্তু তাঁর নাম কি দিল্লি পুলিশের এফআইআর-এ আছে? তাঁকে কি দিল্লি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে? তা নিয়ে এখনও পুলিশের তরফে কিছু জানানো হয়নি।