ভিল্লুপুরম: আর দেখতে হবে না, পৃথিবী শেষ হয়ে যাচ্ছে। নয়তো সন্ধে সাতটার সময় পরিষ্কার আকাশে ইউএফও-র লড়াই দেখা যাচ্ছে কী করে! ওই তো, ইউএফওদুটো একে অন্যের দিকে ক্ষ্যাপা ষাঁড়ের মত তেড়ে যাচ্ছ! ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে কী প্রচণ্ড মারামারি চলছে গো, থামার লক্ষণই নেই। এইবারে দুটোতে ঝাঁপিয়ে পড়বে পৃথিবীর ওপর, আর টুকরো টুকরো হয়ে যাবে সব কিছু। ভয়ের চোটে ঘরে ঢুকে দরজা জানালা বন্ধ করে ইষ্টনাম জপছিলেন তামিলনাড়ুর ভিল্লুপুরমের তিরুকোভিলুর ও উলুনদুরপেট গ্রামের গোটা পঞ্চাশেক মানুষ। ফোনে ফোনে, হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল বার্তা, পৃথিবী শেষ হয়ে যাচ্ছে, অন্য গ্রহের প্রাণীরা আক্রমণ করেছে, বাঁচতে চাইলে যে যাঁর ঘরে ঢুকে পড়ুন এক্ষুনি। একটু বয়স্ক মানুষেরা আবার অতিজাগতিক ব্যাপারস্যাপার নিয়ে ভাবেননি, শয়তান আত্মার কথাই প্রথমে মনে পড়েছিল তাঁদের। বাড়ির বড় ছেলে ও নাতি নাতনিদের ওই আলো দেখা নিষিদ্ধ করা হয়, পাছে তাঁদের কোনও ক্ষতি হয়। পুরোহিত ডেকে ঘরে ঘরে শুরু হয় শান্তি স্ব্যস্তয়ন। এক ভদ্রমহিলা আবার ম্যাজিক জানেন, তিনি তাঁর বোনপোকে হুকুম করেন, আকাশের দিকে না তাকিয়ে সোজা বাড়ি চলে আসতে। তারপর যা হয়, আতঙ্ক, চিৎকার, কান্নাকাটি- সব মিলিয়ে শনিবারের সন্ধেটায় ভিল্লুপুরমের ঝিমিয়ে থাকা গ্রামগুলোয় একেবারে লঙ্কাকাণ্ড যাকে বলে।

পরে অবশ্য জানা গেল, যা ভাবা হয়েছিল, মোটেই তা নয়। দূরে এক বিয়েবাড়িতে তীব্র আলো জ্বালানো হয়েছিল, তারই প্রতিফলন ঘুরে ঘুরে পড়ছিল আকাশে। তা দেখেই গ্রামবাসী মনে করেছিলেন, ইউএফও-দের যুদ্ধ চলছে। সংবাদমাধ্যমের লোকেরা এসে সব কিছু ব্যখ্যা করলেও গ্রামবাসীদের ভয় অবশ্য কাটেনি। অবশেষে ওই বিয়েবাড়িতে গিয়ে একপ্রস্থ ঝগড়াঝাঁটি করে আলো নেভানোর নির্দেশ দেন তাঁরা। বিয়েবাড়ির আলো নিভলেই দেখা যায়, আকাশের যুদ্ধও থেমেছে। ব্যস, খেল খতম। ভিন গ্রহীদের আক্রমণ আর পৃথিবী শেষ না হওয়ার অচরিতার্থতা নিয়ে বাড়ির পথ ধরেন সকলে।