মুম্বই: মুম্বইয়ের মত ব্যস্ত শহরে, যেখানে মানুষের দম ফেলার সময় নেই, সেখানে নাকি অটো চালক তাঁকে রীতিমত জেরা করে জানতে চেয়েছে, কাঁধের ব্যাগ গরুর চামড়া দিয়ে তৈরি কিনা। ‘অসহিষ্ণুতা’ আর গোরক্ষকদের ‘গুণ্ডামি’-র এর থেকে বড় পরিচয় আর কী হতে পারে! এ নিয়ে অগস্ট মাসে ফেসবুকে বিরাট এক পোস্টই লিখে ফেলেছিলেন এক প্রোডাকশন হাউসের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর বরুণ কাশ্যপ। পুলিশে অভিযোগও করেছিলেন ওই অভিযুক্ত অটো চালকের বিরুদ্ধে।

কিন্তু তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, বিষয়টা ঠিক উল্টো। তারা জানাচ্ছে, গরুর চামড়া নিয়ে হইচই শুরু করলে মুফতে আন্তর্জাতিক ‘পাবলিসিটি’ পাওয়া যাবে, এই আশায় কাশ্যপ বেমালুম মিথ্যে বলেছিলেন। পুলিশকে মিথ্যে তথ্য দিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ তৈরির জন্য তাঁর বিরুদ্ধে আম্বোলি পুলিশ এফআইআর করেছে। তবে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি তাঁকে।

জানা গেছে, পুলিশি জেরার মুখে কাশ্যপ মিথ্যে স্বীকার করে নিয়েছেন। যদিও ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁর দাবি, এ নিয়ে তাঁর কিছু জানা নেই, সব অভিযোগ বর্ণে বর্ণে সত্যি, না হলে তা প্রত্যাহার করে নিতেন।

১৯ অগস্ট নিজের ফেসবুক পেজে এক দীর্ঘ পোস্ট করেন বরুণ কাশ্যপ। তা নিয়ে দেশজুড়ে হইচই পড়ে যায়। দাবি করেন, ওদিন বেলা ১১টা নাগাদ আন্ধেরি থেকে অফিস যাওয়ার জন্য অটেরিকশা ধরেন তিনি। রিকশাচালক নাকি আচমকা তাঁকে বলে, তাঁর ব্যাগ থেকে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে, জিজ্ঞেস করে, সেটা গরুর চামড়া দিয়ে তৈরি কিনা। তিনি বলেন, তাঁর ব্যাগ উটের চামড়ার। এরপর অটোচালক নেমে গিয়ে আরও ৩জনকে নিয়ে ফিরে আসে। তারা নাকি তাঁকে ধাক্কা দেয়, নাম জিজ্ঞেস করে। তিনি ‘হিন্দু’ জানতে পেরে ছেড়ে দেয়, বলে, ‘আজ বেঁচে গেলি’।

মুম্বইয়ের শীর্ষ পুলিশ অফিসাররা তো বটেই, মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীশও এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন, অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দেন তিনি।

ঘটনার তদন্তে তৈরি হয় পুলিশের উচ্চপর্যায়ের একটি দল। কিন্তু তদন্তে নেমে পুলিশ দেখে, কাশ্যপের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে প্রকৃত ঘটনা কিছু মিলছে না। তাঁর দেওয়া অটোরিকশা নম্বর অসম্পূর্ণ, অভিযুক্ত চালকের চেহারার যে বর্ণনা দিয়েছেন, তার সঙ্গেও ওই এলাকার কোনও চালকের মিল নেই। যে রাস্তা দিয়ে তিনি অফিস যাচ্ছিলেন বলে দাবি করেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখায় তার ঠিক উল্টো। এমনকী তাঁর সেলফোন লোকেশনেও ওই রুট দেখায়নি। তখন পুলিশ তাঁকে ডেকে এক প্রস্থ জেরা করে। জেরার মুখে ভেঙে পড়ে কাশ্যপ স্বীকার করেন, পরিচিতি পাওয়ার জন্য মিথ্যে অভিযোগ করেছিলেন তিনি।