নয়াদিল্লি: ছবির সেট থেকে প্রিমিয়ার। সর্বত্রই রাম রহিমের সঙ্গে দেখা যেত হানিপ্রীত নামে এক মহিলাকে। শোনা যায়, হানিপ্রীত তার দত্তক কন্যা। শুক্রবার আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর রাম রহিমকে হেলিকপ্টারে করে আদালত থেকে জেলে নিয়ে যাওয়ার সময়ও ঠিক উল্টোদিকে বসে ছিলেন হানিপ্রীত। আইনভঙ্গ করে শুধু ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত বাবার সঙ্গে হেলিকপ্টারে ওঠাই নয়, এক্কেবারে জেলেও বাবার সঙ্গে পৌঁছে যান এই মহিলা! আর এই নিয়েই সোমবার আদালত প্রশ্ন তুলেছে, কী করে হানিপ্রীত সিংহ জেলের ভিতরে বাবার সঙ্গে পৌঁছে গেলেন?


ইন্টারনেট সার্চ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে বাবার সঙ্গে হানিপ্রীতের গুচ্ছ গুচ্ছ ছবি এবং ভিডিও।ভক্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই মহিলাকে নিজের ছেলে-মেয়ের চেয়েও বেশি বিশ্বাস করে ধর্ষক বাবা! কিন্তু, প্রশ্ন হল, এই লাস্যময়ী নারীর সঙ্গে রাম রহিমের সম্পর্ক কী?

কোনও ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, হানিপ্রীত গুরমিত রাম রহিমকে পাপা বলছেন।

কখনও আবার বন্ধু বলছেন। একাধিক ভিডিওতে বাবার সঙ্গে হাসিমজাও করতেও দেখা যাচ্ছে হানিপ্রীতকে।

হানিপ্রীতের আসল নাম প্রিয়ঙ্কা। হরিয়ানার ফতেহাবাদের মেয়ে।প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে নিজের এক ভক্ত বিশ্বাস গুপ্তার বিয়ে দেয় বাবা গুরমিত রাম রহিম।তারপর প্রিয়ঙ্কাকে মেয়ে হিসাবে দত্তক নেয়।বাবা তাঁর নতুন নাম দেয় হানিপ্রীত।

কিন্তু, এরকমই চমক! হানিপ্রীতের স্বামী বাবা গুরমিত রাম রহিমের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেন ! বলেন, বাবা তাঁর বউকে তাঁর থেকে আলাদা করে দিয়েছেন বাবা রহিম! নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন!

নিজের স্ত্রী হানিপ্রীতকে বাবার ডেরা থেকে বার করে আনতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ পর্যন্ত হন স্বামী। কিন্তু, স্বামীর কাছে যাওয়ার পরিবর্তে বাবা রাম রহিমের কাছেই থেকে যান হানিপ্রীত।

উল্টে নিজের স্বামীকেই ডিভোর্স দিয়ে দেন তিনি। রাম রহিম যখন জেলে, তখন তাঁর ছায়াসঙ্গী হানিপ্রীতের স্বামীর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন তিনি।

স্বঘোষিত ধর্মগুরু রাম রহিম ২০০৯-এর ডিসেম্বরে একটা জমকালো পার্টির আয়োজন করে ঘোষণা করেছিলেন যে, প্রিয়ঙ্কাকে তিনি দত্তক কন্যা হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

ডেরা প্রধানের জামাতা হিসেবে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হিসেবে সুযোগ সুবিধা পেতে থাকেন বিশ্বাস গুপ্তা। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই রাম রহিমের আসল উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে যায় তাঁর কাছে। বিশ্বাস গুপ্তার দাবি, তিনি ২০১১-র মে মাসে এক সন্ধেয় রাম রহিমের প্রতি বিশ্বাস ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।ওই সন্ধেয় তিনি দেখতে পান, রাম রহিমের গুহার দরজা খোলা। ভেতরে গিয়ে নিজের স্ত্রীকে রাম রহিমের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পান।

বিশ্বাস গুপ্তার দাবি, সত্য ঘটনা কাউকে বললে চরম পরিণতির হুমকি তাঁকে দিয়েছিলেন রাম রহিম। এরপর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ডেরার শিবির ছাড়েন বিশ্বাস গুপ্তা। পাঁচকুলাতেই থাকতে শুরু করেন। কিন্ত রাম রহিমের লোকজন তাঁকে হেনস্থা চালিয়ে যায় বলে বিশ্বাস গুপ্তার অভিযোগ।

স্ত্রীকে রাম রহিমের খপ্পর থেকে স্ত্রীকে বের করে আনতে ২০১১-তে তিনি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।

হানিপ্রীতের প্রাক্তন স্বামীর এই চাঞ্চল্যকর দাবিই, বাবা গুরমিত ও পালিত কন্যা বলে পরিচিত হানিপ্রীতের সম্পর্কের রহস্য আরও ঘনীভূত করেছে।