শ্রীনগর ও নয়াদিল্লি: জম্মু ও কাশ্মীরের প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় রাষ্ট্রীয় রাইফেলস জওয়ানদের মধ্যে খুশির হাওয়া। কেননা, বাহিনীর তিন জওয়ানকে সেনা মেডেল দেওয়া হয়েছে। কুখ্যাত হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গি বুরহান ওয়ানিকে খতম করার পুরস্কার হিসেবেই ওই তিন জওয়ানকে প্রজাতন্ত্র দিবসে এই বীরত্বের পুরস্কার প্রদান করা হল। উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই বুরহানের মৃত্যুর পর বেশ কয়েকমাস ধরে অশান্তির আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল উপত্যকায়।


গত বছরের ৮ জুলাই বুরহানের বিরুদ্ধে অভিযানের বিস্তারিত সামনে এসেছে। রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের তরুণ মেজর সন্দীপ কুমারের নেতৃত্বে এই অভিযান হয়েছিল। নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর এসেছিল যে, বুমদুরা গ্রামে  একটি বাড়িতে গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে সরতাজ আজিজ ও আরও দুই জঙ্গি। অভিযানের সময় সমস্ত প্ররোচনা অগ্রাহ্য করে মাথা ঠাণ্ডা রেখে জঙ্গিদের দমন করতে সক্ষম হয় সন্দীপ কুমারের নেতৃত্বাধীন বাহিনী।

অনন্তনাগ থেকে ১৮ কিমি দূরের গ্রামটি ঘিরে ফেলেছিল বাহিনী। কিন্তু সেনার আসার খবর ফাঁস হয়ে যায়। এরফলে লক্ষ্য সিদ্ধি করার কাজ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে।

যে বাড়িতে জঙ্গিরা ঘাঁটি গেড়েছিল সেখানে পৌঁছতে অসীম ধৈর্য্য সহকারে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় মেজর কুমার, ক্যাপ্টেন মানিক শর্মা ও নায়েক অরবিন্দ সিংহ চৌহানদের। কয়েক মুহুর্তে মধ্যেই দলে দলে ভিড় করে বিক্ষোভকারীরা। সেনা জওয়ানদের লক্ষ্য করে তারা পাথর ছুঁড়তে শুরু করে।

ক্যাপ্টেন শর্মা ও আরও দুই জনের নেতৃত্বে আক্রমণকারী দল ওই বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করে। সেই সময় মেজর কুমার তাঁদের পিছনে দাঁড়িয়ে বিপদের সময় কভার ফায়ারিংয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু সেনা জওয়ানদের লক্ষ্য করে বিক্ষোভকারীরা পাথর ছুঁড়তে শুরু করে। ফলে সেই সময় পিছিয়ে আসতে হয়।

তারপর শুধু অপেক্ষা আর বাড়িটিকে ঘিরে ফেলার ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করার কাজ চলে। তখন পাহাড়ি এলাকায় দ্রুত সন্ধে নেমে আসছে। বিক্ষোভকারীরা হাতে পাথর নিয়ে দাঁড়িয়ে। ওই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত এক পুলিশ অফিসার এ কথা জানিয়েছেন।

শেষপর্যন্ত মেজর কুমার আরও একবার ওই বাড়িটিতে ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু জঙ্গিরা গুলি চালাতে শুরু করে। পাল্টা জবাব দেয় সেনাও। আজিজের পালানোর চেষ্টা করলেও গুলি বিনিময়ে মারা যায়। তখন প্রায় সন্ধে ঘনিয়ে আসছে। সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। কিন্তু আরও দুই জঙ্গি ওই বাড়িতেই রয়ে গিয়েছে।

এর পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের প্রতিবাদ আরও বাড়ছে। এই অবস্থায় মেজর কুমার ফের আক্রমণ চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। বাড়ির ভেতরে থাকা দুই জঙ্গি গুলি চালাতে চালাতে  পালানোর চেষ্টা করে। একজনকে আড়াল করে জঙ্গি পাকভেজ আহমেদ লস্করিকে গুলি চালাতে দেখা যায়। গুলি চালাতে চালাতে সে ওই ব্যক্তিকে কাছেই একটি আপেল বাগানে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সেনার পাল্টা গুলিতে মৃত্যু হয় তার। ততক্ষণে আড়ালে থাকা ব্যক্তিও গুলি চালাতে শুরু করে। জওয়ানদের পাল্টা গুলিতে সেও মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে জানা যায়, ওই নিহত জঙ্গি হিজবুলের কম্যান্ডার বুরহান। কাশ্মীর উপত্যকার জঙ্গি কার্যকলাপের পোস্টার বয়।