নয়াদিল্লি: গতকাল রাত ৮ টা নাগাদ নিজের বাড়ির সামনেই আততায়ীর গুলি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে নির্ভীক সাংবাদিক বলে পরিচিত ৫৫ বছরের গৌরী লঙ্কেশের। বরাবরই গেরুয়া শিবিরের কট্টর সমালোচক হিসেবেও পরিচিতি ছিল তাঁর। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট, নোট বাতিলকে কটাক্ষ করে কয়েকটি পোস্ট ও সমকামীদের অধিকার সংক্রান্ত একটি ইউটিউব লিঙ্ক এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে শ্লেষাত্মক পোস্ট নিজের ফেসবুক ও ট্যুইটার পেজে জীবনের শেষ ২৪ ঘন্টায় শেয়ার করেছিলেন তিনি। গত তিনমাসে তাঁর কন্নড় সাপ্তাহিকীতে শেষ আটটি লেখায় ছিল কেন্দ্রীয় সরকার ও তার নেতাদের সমালোচনা। তাঁর অন্তিম সাপ্তাহিক নিবন্ধের বিষয় ছিল উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর হাসপাতালে শিশুমৃত্যুর ঘটনা। তিনি হাসপাতালের চিকিত্সক ডা. কাফিল খানের অপসারণের সিদ্ধান্তেরও তীব্র সমালোচনা করেছিলেন।
গত ২৪ ঘন্টায় ফেসবুকে ও ট্যুইটারে যে পোস্টগুলি শেয়ার ও রিট্যুইট করেছেন, সেগুলির অধিকাংশই ছিল বিজেপির প্রতি সমালোচনামূলক। এরমধ্যে কেরলের আমলা জেমস উইলসনের পোস্টও রয়েছে। জেমস প্রায়শই বিশেষ করে নোট বাতিল নিয়ে কেন্দ্রের সমালোচনামূলক পোস্ট করেন। গত ২৪ ঘন্টায় সোশ্যাল মিডিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কেন ফেরত পাঠাতে চায়, এ বিষয়ে কেন্দ্রের কাছে সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন সংক্রান্ত একটি খবর সহ বেশ কয়েকটি ওয়েব লিঙ্ক সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন গৌরী।
তাঁর ট্যুইট, আমার কেন মনে হয় যে ‘আমাদের’ কেউ কেউ নিজেদের মধ্যেই লড়াই করছি? আমরা সবাই আমাদের ‘বড় শত্রু’ কে, তা জানি। আমরা কি সবাইকে সে ব্যাপারে মনোযোগ দিতে পারি না?
এই ট্যুইটের বিষয়বস্তু অবশ্য স্পষ্ট নয়।
গৌরীর ফেসবুক প্রোফাইল তাঁর ট্যুইটার টাইমলাইনের মতোই। তাঁর ফেসবুক পেজে রয়েছে দলিত ছাত্র রোহিত ভেমুলার একটি ছবি। আর ট্যুইটার পেজে রয়েছে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা কানহাইয়া কুমারের ছবি।
আততায়ীর গুলিতে খুন হওয়ার কয়েক ঘন্টা আগে গৌরী বাবা প্রায়ত সাংবাদিক পি লঙ্কেশের সঙ্গে তোলা তাঁর একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন। শিক্ষক দিবসে ওই পোস্টের মাধ্যমে বাবাকে শ্রদ্ধা জানান গৌরী। তিনি লেখেন, বাবা খুব একটা কাছে থাকতেন না। কিন্তু তিনিই তাঁর জীবনের সবচেয়ে সেরা শিক্ষক।
বিজেপি কর্মীদের সম্পর্কে লেখার জন্য একটি মামলায় হেরে যাওয়ার পর এক সাক্ষাত্কারে গৌরী বলেছিলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ট্যুইট ও তাঁর সম্পর্কে বিভিন্ন মন্তব্য দেখে দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হন তিনি।