নয়াদিল্লি: একদিকে, যখন দেশে কালো টাকা ফিরিয়ে আনার দাবিতে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব বিরোধীরা, অন্যদিকে তখন সামনে এল বিস্ফোরক তালিকা। যাতে নাম রয়েছে ৫০০ জন ভারতীয়র। এছাড়াও নাম রয়েছে ১৪০ জন রাষ্ট্রপ্রধানের।


দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-সহ বিশ্বের একশোটিরও বেশি সংবাদমাধ্যমের করা যৌথ তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। একেই বলা হচ্ছে 'পানামা পেপারস' । তথ্য অনুযায়ী, কর ফাঁকি দিতে স্বনামে এবং বেনামে বিভিন্ন ট্যাক্স হাভেন কিংবা করের স্বর্গরাজ্য বলে পরিচিত দেশের সংস্থায় বিনিয়োগ করেছেন বহু প্রভাবশালী ব্যক্তি।

যে ৫০০ জন ভারতীয়র মধ্যে নাম উঠে এসেছে, তাতে রয়েছে অমিতাভ বচ্চন, ঐশ্চর্যা রাই বচ্চন, ইন্ডিয়া বুলসের প্রতিষ্ঠাতা সমীর গহলৌত, ডিএলএফ কর্তা কে পি সিংহ, প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল হরিশ সালভে, কলকাতার ব্যবসায়ী শিশির বাজোরিয়ার। অভিযোগ, এঁরা সকলেই কর ফাঁকি দিতে বিদেশে বিভিন্ন সংস্থায় বিনিয়োগ করেছেন।

যদিও এবিষয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য অমিতাভ বচ্চনকে ইমেল এবং ফোন করা হলেও, তাঁর কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তাঁকে নিয়ে পানামা পেপারসের সব তথ্য ভুল বলে দাবি, বিগ বি-র পুত্রবধূ ঐশ্চর্যা রাই বচ্চনের মিডিয়া উপদেষ্টার। প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল হরিশ সালভের সাফাই, তিনি কোনও আইন লঙ্ঘন করেননি। ব্যবসায়ী তথা বিজেপি নেতা শিশির বাজোরিয়ার দাবি, বিদেশে তাঁর ব্যবসা থাকলেও, তিনি কোনও কর ফাঁকি দেননি।

করফাঁকি দিয়ে বিপুল অঙ্কের কালো টাকা লগ্নি, অ্যাকাউন্ট। লগ্নি ও অ্যাকাউন্ট সেই দেশে যেখানে কর নিয়ে আইনি ফাঁস একেবারেই নেই। এই ঘটনায় সারা বিশ্বেই আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। অভিযোগের গুরুত্ব এতটাই যে নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্র। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন সংস্থাকে নিয়ে একটি গোষ্ঠী গঠন করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানিয়েছেন, এদিন সকালেই বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি জেটলিকে সিবিডিটি, আরবিআই এবং এফআইইউ (ফিনান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট)-কে নিয়ে একটি গোষ্ঠী গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন।

ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) কর্তৃক ফাঁস হওয়া ওই গোপন তালিকা সম্পর্কে তদন্ত করবে কালো টাকা সংক্রান্ত বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)ও। জেটলি জানিয়েছেন, বিশেষ গোষ্ঠী ওই আমানতগুলির ওপর ধারাবাহিকভাবে নজরদারি চালাবে এবং যে আমানতগুলি অবৈধ হবে, সেগুলির মালিকদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শুধু ভারতই নয়, তালিকা অনুযায়ী, এতে নাম রয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘনিষ্ঠ ২ ব্যক্তি, চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের আত্মীয়ের। এছাড়াও তালিকায় নাম রয়েছে মিশরের প্রাক্তন শাসক হোসনি মুবারক, লিবিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গদ্দাফি, আর্জেন্তিনার ফুটবলার লিওনেল মেসির।

পানামা থেকে সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, কর সংক্রান্ত প্রায় ১ কোটি ১৫ লক্ষ নথি প্রকাশিত হয়েছে। সকলের বিরুদ্ধে অবৈধ বিদেশি লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। গত ৪০ বছরের বিস্তারিত তথ্য ফাঁস হয়েছে। জার্মানির একটি দৈনিক অজানা সূত্র থেকে ওই নথি হস্তগত করেছে। সারাবিশ্বে তা শেয়ার করেছে আইসিআইজে।

জেটলি জানিয়েছেন, আগামীদিনে আরও অনেক নাম উঠে আসতে পারে। এই তদন্তকে তিনি স্বাগত জানাচ্ছেন। তিনি বলেছেন, সারা বিশ্ব অনেক বেশি স্বচ্ছ হয়ে উঠছে। বেআইনি আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমন্বয় বাড়ছে। জেটলি আরও জানিয়েছেন, এর আগেও এ ধরনের তথ্য ফাঁস হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, ২০১১-তে এইচএসবিসি অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের নাম প্রকাশ্যে এসেছিল। ৫৬৯ অ্যাকাউন্ট হোল্ডারকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। এরমধ্যে ৩৯০ টি বেআইনি। ১৫৪ টি ক্ষেত্রে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ২০১৩-তে আইসিআইজে যে ৭০০ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করেছিল, তদন্তের ভিত্তিতে সেক্ষেত্রে বেআইনি কারবারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।