গুরুগ্রাম: গর্ভযন্ত্রণায় ছটফট করছেন ২৮ বছরের তরুণী। অথচ মাথার ওপর পাখা ঘোরা তো দূরের কথা, হাসপাতালে একটা টিমটিমে বাল্বও জ্বলার অবস্থায় নেই। কারণ গুরুগ্রামের সেই কুখ্যাত লোডশেডিং। রাজধানীর কাছে এই শহরে বহুজাতিক সংস্থাগুলির যতই দাপাদাপি চলুক, যতই এর নাম দেওয়া হোক মিলেনিয়াম সিটি, স্থানীয় মানুষের দুর্ভাগ্যে ছেদ পড়েনি একটুও। এ ক্ষেত্রে অবশ্য ঘটনার শেষটুকু বেদনাদায়ক হয়নি। সরকারি সিভিল হাসপাতালে একজন চিকিৎসকও না থাকা সত্ত্বেও শুধু কয়েকজন নার্সের জেদ ও ঝুঁকি নেওয়ার সাহসের জেরে বেঁচে গেছেন ওই অন্তঃসত্ত্বা। মোবাইল ফোনের ফ্ল্যাশলাইটের ভরসায় হাসপাতালের নার্সরা পৃথিবীতে আনতে পেরেছেন সুস্থসবল এক শিশুপুত্রকে।

না, এ কোনও 'থ্রি ইডিয়টস''-এর গল্প নয়। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে 'আল ইজ ওয়েল'-এর ভরসায় পৃথিবীতে পা রাখেনি কোনও শিশু। কিন্তু লোডশেডিংয়ের মধ্যে, জেনারেটরহীন একটি হাসপাতালে মোবাইলের আলোয় শিশুর জন্মকথা হার মানাতে পারে যে কোনও বলিউডি চিত্রনাট্যকে। শিশুটির বাবা কপিল কুসুম জানিয়েছেন, রবিবার সন্ধেয় ওই হাসপাতালে ভর্তি হন তাঁর স্ত্রী কবিতা। তখন থেকেই বিদ্যুতের অভাবে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জ্বলছিল মোমবাতি, করিডোরগুলো ডুবে ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকারে। মাঝরাত নাগাদ কবিতার প্রচণ্ড গর্ভযন্ত্রণা শুরু হয়। কর্মরত নার্সকে খবর দেওয়া হলেও কোনও ডাক্তার তখন হাসপাতালে ছিলেন না। বাধ্য হয়ে মোমের আলোতেই কবিতাকে ডেলিভারি রুমে নিয়ে যান নার্সরা। ইনভার্টারও নষ্ট থাকায় মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে তাঁরা শুরু করেন জন্মদান প্রক্রিয়া। কপিল জানিয়েছেন, ডেলিভারি রুমের বাইরে ওই ২৫ মিনিট তাঁর জীবনের সবথেকে দীর্ঘ প্রতীক্ষা। সোমবার সকালে শিশুপুত্র সহ সুস্থ কবিতাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তবে এত কিছুর পরেও হাসপাতালটির বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি এতটুকু। মঙ্গল ও বুধবার সব মিলিয়ে ১১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না এখানে।