গুরুগ্রাম: গুরুগ্রামের রায়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ছাত্র হত্যার ২ দিন পর উঠে এল চমকে ওঠার মত তথ্য। যে বাসের কন্ডাক্টরকে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র প্রদ্যুম্ন ঠাকুর হত্যার অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করেছে, সেই বাসেরই চালক দাবি করেছেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁকে চাপ দেয় মেনে নিতে যে, বাসেই ছুরি রাখা ছিল।

ওই বাস চালকের নাম সৌরভ রাঘব। এক সংবাদপত্রের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সৌরভ বলেছেন, শুধু রায়ান কর্তারাই নন, উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসাররাও তাঁকে থার্ড ডিগ্রির ভয় দেখিয়ে স্বীকার করতে চাপ দেন যে খুনের ছুরি তাঁদের বাসের যন্ত্রপাতির বাক্সে রাখা ছিল।

সৌরভের অভিযোগ, শনিবার রাত দেড়টার সময় তাঁকে আটক করে পুলিশ। ঘাবড়ে দেওয়ার সবরকম চেষ্টা করে। কিন্তু কোনওমতেই তিনি মেনে নিতে রাজি হননি, যে যন্ত্রপাতির বাক্সে ছুরি রাখতেন তাঁরা।

পুলিশ বোঝাতে চাইছে, ওই ছুরি দিয়েই প্রদ্যুম্নকে খুন করেন কন্ডাক্টর অশোক কুমার। তাদের বক্তব্য, বাইরে থেকে আনতে হয়, নিজেদের টুল বক্সের ছুরি দিয়ে সহজেই কাজ সেরেছেন অশোক। কিন্তু বাস চালক সৌরভের এই বক্তব্য স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তুলেছে, তাহলে কি রায়ান কর্তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পুলিশ প্রভাবশালী কাউকে বাঁচাতে চাইছে।

সৌরভ অভিযোগ করেছেন, স্কুলের প্রিন্সিপাল, তিনজন শিক্ষক ও কয়েকজন শীর্ষ আধিকারিক পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে মিলে তাঁকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ঘটনার ঠিক একদিন আগেই তিনি নিজে টুল বক্স খুলে দেখেছিলেন। তাই ১০০ শতাংশ নিশ্চিত ছিলেন, ছুরি তাতে ছিল না।

সৌরভ বলেছেন, ঘটনার দিন সকাল আটটা বাজতে পাঁচে তাঁরা পড়ুয়াবোঝাই বাস নিয়ে আসেন। তিনি বাসেই ছিলেন, অশোক স্কুলের ভেতরে যান। প্রদ্যুম্নের দেহ উদ্ধারের পরেও তাঁর অশোকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁর কথায়, অশোক স্বাভাবিক ছিলেন, কোনও অস্বাভাবিকতা ছিল না। তবে সারা শরীর ছিল রক্তে মাখা। তিনি বলেন, প্রদ্যুম্নের মৃত্যুর সময় তিনি স্কুল করিডোরে ছিলেন। শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, প্রিন্সিপাল- সকলে থাকা সত্ত্বেও কেই প্রদ্যুম্নকে মাটি থেকে তুলে নেননি বরং অশোককে চাপ দেন, তাকে তুলে নিয়ে গাড়িতে তুলতে। তিনিই তাকে গাড়ির পিছনের আসনে শোয়ান, শিক্ষকরা তাকে নিয়ে যান স্কুলে।

পুলিশের বক্তব্য, প্রদ্যুম্ন স্কুলে এসে বাথরুম যায়। অশোক সেখানে আগে থেকেই ছিলেন। তিনি তাকে যৌন হেনস্থার চেষ্টা করেন। প্রদ্যুম্ন বাধা দিলে ছুরি দিয়ে তাকে খুন করেন তিনি। যদিও পুলিশের এই থিওরি মানতে রাজি নন প্রদ্যুম্নের বাবা বরুণ ঠাকুর। সিবিআই তদন্ত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন তিনি।

আগামীকাল পর্যন্ত বন্ধ থাকছে রায়ান স্কুল। নার্সারি ও জুনিয়র সেকশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। স্কুলে নিরাপত্তার অভাবের অভিযোগে প্রিন্সিপাল সহ কয়েকজন শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে অন্য শিক্ষকদের।