নয়াদিল্লি: গুরগাঁওয়ের রায়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র প্রদ্যুম্ন ঠাকুরের খুনের তদন্ত তাড়াতাড়ি শেষ করার তাগিদে সম্পূর্ণ নির্দোষ বাস কন্ডাক্টর অশোক কুমারকে ফাঁসিয়ে দেয় স্থানীয় পুলিশ। সিবিআই তদন্তে উঠে এসেছে এই তথ্য। অশোকের বিরুদ্ধে প্রদ্যুম্নকে যৌন নিগ্রহ বা খুন- কোনও কিছুর প্রমাণ পায়নি তারা।


অশোক কুমার জানিয়েছেন, তাঁর ওপর অত্যাচার চালানো ও প্রকৃত দোষীকে আড়াল করার কারণে হরিয়ানা পুলিশ ও স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করবেন তিনি।  তাঁর আইনজীবী বলেছেন, সিবিআই তাদের ক্লোজার রিপোর্ট ফাইল করলে পুলিশ ও স্কুলের বিরুদ্ধে তাঁরা আইনি পদক্ষেপ করবেন। তাঁর অভিযোগ, স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য অশোককে নেশা করানো হয়, চলে শারীরিক অত্যাচার।

পুলিশ ইচ্ছে করে তদন্তের মুখ ঘুরিয়ে দেয় বলে আইনজীবী অভিযোগ করেছেন। যে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সিবিআই প্রকৃত অপরাধী পর্যন্ত পৌঁছে গেল,  সেই ফুটেজই রাজ্য পুলিশ বাতিল করে দেয় অস্পষ্ট বলে। কেন, কাদের চাপে এক নির্দোষকে ফাঁসানোর চেষ্টা করল তারা।

প্রদ্যুম্ন হত্যার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অশোক কুমারকে খুনী বলে দাবি করে গুরগাঁও পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজে অশোককে বাথরুম থেকে বার হতে দেখা যাচ্ছে। সেই ফুটেজ দেখিয়ে তারা বলে, বাসের টুলবক্সের মধ্যে থাকা ছুরি সে বাথরুমে পরিষ্কার করছিল, তখন সেখানে ঢোকে প্রদ্যুম্ন। তাকে যৌন নির্যাতনের চেষ্টা করে সে, তারপর ছুরি দিয়ে গলা কেটে দেয়। কোথা থেকে সেই ছুরি উদ্ধার হল সে ব্যাপারে কিছু বলেনি পুলিশ। কিন্তু ২ মাসের সিবিআই তদন্তে স্পষ্ট, ছুরি আসলে উদ্ধার হয় বাথরুমের কমোড থেকে। যে একাদশ শ্রেণির ছাত্রকে প্রদ্যুম্ন হত্যার অভিযুক্ত হিসেবে আটক করা হয়েছে, সে খুনের পর ছুরিটি কমোডে ফেলে দেয়।

সিবিআই, নিজের বাবা ও একজন স্বাধীন সাক্ষীর সামনে ওই কিশোর স্বীকার করেছে, স্থানীয় একটি দোকান থেকে ছুরি কিনেছিল সে। সেই দোকান সে সিবিআইকে দেখিয়েওছে। সেটা নিয়েই ওই ছাত্র স্কুলে এসেছিল। এছাড়া আর কোনও ছুরি স্কুলে ছিল না। ফলে অশোক কুমার ছুরি দিয়ে প্রদ্যুম্নর গলা কাটে বলে পুলিশের যে দাবি, তা ভিত্তিহীন।

সিবিআই জানিয়েছে, প্রদ্যুম্নের গলা কাটার মুহূর্তের মধ্যে অভিযুক্ত ছাত্র বাথরুম ছেড়ে বেরিয়ে যায়। এত অল্প সময়ের মধ্যে গোটা ঘটনা ঘটে যে প্রদ্যুম্ন কোনও বাধাই দিতে পারেনি। স্রেফ পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে ও অভিভাবক-শিক্ষক বৈঠক বন্ধ রাখতে খুন করতেও পিছপা হয়নি সে।

সিবিআইয়ের তদন্তে পরিষ্কার, প্রদ্যুম্ন হত্যার পর উত্তেজিত জনতা, সংবাদ মাধ্যম ও রাজনৈতিক নেতাদের পুলিশের ওপর চাপ ছিল, যত দ্রুত সম্ভব অপরাধীকে ধরতে হবে। তাই তারা ওদিনই শুধু সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে ওই বাস কন্ডাক্টরকে হাঁড়িকাঠে চড়িয়ে দেয়, তাকে চাপ দিয়ে স্বীকারোক্তিও আদায় করে নেয়। কিন্তু সিবিআই জানিয়ে দিয়েছে, অশোক কুমারের বিরুদ্ধে তাদের কোনও অভিযোগ নেই।