কোচি: মুডিস ভারতের রেটিং বাড়িয়ে দিলেও কেন্দ্রের প্রথমে এনডিএ সরকারের বিমুদ্রাকরণ, তার পরপরই 'তড়িঘড়ি' জিএসটি চালু করার ধাক্কায় দেশের অর্থনীতির গতি থমকে গিয়েছে বলে অভিমত জানালেন মনমোহন সিংহ। কেরলে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফের এক জনসভায় নরেন্দ্র মোদী সরকারের নীতির তীব্র সমালোচনা করে ৫০০, ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে বিরাট, ঐতিহাসিক ব্লান্ডার বা মহাভূলও বলেছেন তিনি।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, গত জুলাইয়ে মানুষের ওপর এক ধাক্কায় জিএসটি চাপিয়ে দিয়ে দুর্দশার বোঝা বাড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি সরকার। তিনি বলেন, নোট বাতিল আর চটজলদি জিএসটি রূপায়ণের নিট ফল কী? আমাদের আর্থিক বৃদ্ধির গতি থমকে গিয়েছে। ২০১৫-১৬ বর্ষের ৭.২ শতাংশ থেকে জিডিপি বৃদ্ধির হার ২০১৭-১৮ বর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে ৫.৭ শতাংশে নেমে এসেছে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা, ছোট শিল্পগুলি মার খেয়েছে বলেও জানান মনমোহন। বলেন, এই পরিস্থিতি এখনই কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনাও আমি দেখতে পাচ্ছি না।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিএসটির ভাবনাকে কংগ্রেস সমর্থন করেছিল। কিন্তু আমরা হলে জিএসটি চালু করতাম আগাম যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে, সব দিকে খেয়াল রেখে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল এক দেশ, এক কর কাঠামো। বিমুদ্রাকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী দাবি করেছিলেন, এতে কালো টাকা উদ্ধার হবে, সন্ত্রাসবাদ দমন করা যাবে, পাকিস্তান থেকে জাল নোট আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু নতুন করে যন্ত্রণা, হয়রানি ভোগ করা ছাড়া এই হঠকারী পদক্ষেপের ফলে ভারতবাসীর কি পেয়েছেন? বিজেপি অনেক 'লম্বাচওড়া প্রতিশ্রুতি' দিয়ে ক্ষমতায় এলেও সেগুলি রূপায়ণে ব্যর্থ হয়েছে বলে কটাক্ষ করেন মনমোহন। বলেন, মোদী ভোটপ্রচারে বলেছিলেন, বিদেশে গচ্ছিত কালো টাকা দেশে ফেরাবেন, সাড়ে তিন বছর বাদে দেশবাসী জানতে চাইছেন, বিজেপি শাসনে কী লাভ হল তাঁদের?
মুডিসের বিচারে ভারতের ক্রেডিট রেটিং বিএএ৩ থেকে একধাপ ওপরে বিএএ২ অর্থাত্ 'ইতিবাচক' থেকে 'স্থিতিশীল' স্তরে উঠে এলেও তাতে দেশের অর্থনীতি সঙ্কট দশা কাটিয়ে উঠতে পারেনি বলে মনে করেন মনমোহন। বলেন, মুডিস তাদের মতামত জানিয়েছে। আমি খুশি। কিন্তু আমরা যেন এই ভ্রান্ত ধারণায় প্রলুব্ধ না হই যে, অর্থনীতি বিপদ কাটিয়ে উঠেছে। গতকাল মুডিস ভারতের রেটিং বাড়িয়ে দিয়ে বলেছে, সংস্কারের পথে ক্রমবর্ধমান ঋণের মোকাবিলা করে স্থিতিশীলতা আনা যাবে।
১৩ বছর বাদে ভারতের রেটিং বাড়িয়ে মুডিসের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে গতকালই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, দেরিতে হলেও এপর্যন্ত নেওয়া সংস্কারমূলক পদক্ষেপগুলির স্বীকৃতি মিলল। সেই প্রেক্ষাপটেই কোচিতে এক আলোচনাচক্রে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার নিজেই বলছে, তারা আর্থিক বৃদ্ধির হার ৮ থেকে ১০ শতাংশে নিয়ে যেতে চায়। সেজন্য অর্থনীতিকে দৃঢ় ভাবে দিশা দেখিয়ে এগতে হবে।
পাশাপাশি অশোধিত তেলের উর্ধ্বমুখী দর দেশের আর্থিক সিস্টেমকে আঘাত করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন মনমোহন। বলেন, মাত্র কয়েক মাস আগেও অশোধিত তেলের দাম ছিল ৪০-৪৫ মার্কিন ডলার। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৬২-৬৪ মার্কিন ডলার। এর জেরে ব্যালেন্স অব পেমেন্টে প্রভাব পড়তে পারে, ক্ষতি করতে পারে আর্থিক ব্যবস্থারও।