লখনউ: হাথরস কাণ্ডে উত্তাল গোটা দেশ। সরব বিরোধীরা। এরই মধ্যে ফরেনসিক রিপোর্টের উল্লেখ করে যোগী রাজ্যের পুলিশের দাবি, তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়নি। কিন্তু সেই রিপোর্টের সঙ্গে সহমত নয় উত্তরপ্রদেশের আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিএমও। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিএমও জানিয়েছেন, ধর্ষণের অভিযোগের ১১ দিন পরে ওই তরুণীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। এতদিন পরে ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া সম্ভব নয়। ফলে ধর্ষণ হয়েছিল কি হয়নি সে বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, আলিগড়ের এই হাসপাতালে দুই সপ্তাহ ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন ওই তরুণী।
জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজের সিএমও আজিম মালিকের কথায়, ’’ধর্ষণের ঘটনার ১১দিন পরে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারি নির্দেশিকায় কঠোর ভাবে বলা হয়েছে, ঘটনার ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ধর্ষণের ঘটনা সম্পর্কে এই রিপোর্ট সঠিক ভাবে কিছু বলতে পারবে না।‘‘
গত ১৪ সেপ্টেম্বর ওই দলিত তরুণীকে উচ্চবর্ণের চারজন যুবক গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। এরপর তরুণীকে ২২ সেপ্টেম্বর ভর্তি করা হয়েছিল এএমইউ-র হাসপাতালে। ম্যাজিস্ট্রেটকে নিজের বয়ান দেওয়ার আগে পুলিশ ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছিল। নির্যাতিতার বয়ানের ভিত্তিতে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয় ২৫ সেপ্টেম্বর। অর্থাৎ ঘটনা ঘটে যাওয়ার ১১ দিন পরে। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে এডিজি আইনশৃঙ্খলা প্রশান্ত কুমার জানিয়েছিলেন এফএসএল রিপোর্ট অনুযায়ী ভিসেরার নমুনায় শুক্রানু বা বীর্যের কোনও উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল অত্যাচারের ফলে ট্রমা থেকে ওই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই পুলিশ বলছে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি।
৩ অক্টোবর জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগ হাথরসের সাদাবাদ পুলিশ স্টেশনের সার্কল অফিসারকে চিঠি লেখে। সেখানে তাদের মতামত জানানো হয়। চিঠির নীচে সই করেছিলেন অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর ফইজ আহমেদ ও চেয়ারম্যান চিকিৎসক সইদ। মেডিক্যাল কলেজের রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোশিয়েশনের সভাপতি চিকিৎসক হামজা মালিক এই ফরেন্সিক রিপোর্ট নির্ভরযোগ্য নয় বলে জানিয়েছিলেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন ধর্ষণের ঘটনার ১১ দিন পরে কী করে সেই প্রমাণ খুঁজে পাওয়া সম্ভব? ২-৩ দিনের পর শুক্রানু আর বেঁচে থাকে না। ২২ সেপ্টেম্বর ডাক্তাররা ওই তরুণীকে উপর উপর পরীক্ষা ( লোকাল টেস্ট) করেন। জোর করে ওই তরুণীর যৌনাঙ্গে কিছু প্রবেশ করানোর মতো প্রমাণ মিলেছিল। কিন্তু ধর্ষণের ঘটনার উল্লেখ করা হয়নি। ফরেন্সিক রিপোর্টের মুখাপেক্ষী হয়েছিল পুলিশ।সফদরজং হাসপাতালের রিপোর্টেও যৌনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। ফলে ফরেন্সিক রিপোর্টের গোড়াতেই গণ্ডগোল রয়েছে বলেই মত জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজের।