মুম্বই: মোদী সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পর সারা দেশে যে নগদের হাহাকার উঠেছে, তার কেন্দ্রে রয়েছে দুটি ভিন্ন নোট একটি হল ২ হাজার টাকা এবং অন্যটি নতুন ৫০০ টাকা।


একদিকে যেখানে বাজার ছেয়ে গিয়েছে ২০০০ টাকার নোটে, সেখানেই নতুন ৫০০ টাকার নোটের আকাল দেখা দিয়েছে। যার জেরে, অনেকের মনেই এই প্রশ্ন উঠছে, কেন কেন্দ্র আচমকা ২০০০ টাকার নোটের ওপর এত গুরুত্ব দিল?


উত্তর দিয়েছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এক কর্তা। নাম না জানানোর শর্তে ওই কর্তা জানান, প্রথমত ২ হাজার টাকার নোট ছাপা হয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কে। অন্যদিকে, নতুন ৫০০ টাকার নোট ছাপা হয়েছে মহারাষ্ট্রের নাসিক ও মধ্যপ্রদেশের দেবসে স্থিত কেন্দ্র-শাসিত টাঁকশালে।


ওই কর্তার দাবি, নোটের এই উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য একা দায়ী কেন্দ্র। তাঁর অভিযোগ, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এধরনের রিপোর্ট আসতে থাকছে। এতে তাঁরা বিব্রত এবং একইসঙ্গে উদ্বিগ্নও।


তবে, তিনি এই পরিস্থিতির জন্য দায় নিতে অস্বীকার করেন। তাঁর প্রশ্ন, আরবিআই-কে কেন দোষারোপ করা হচ্ছে? তিনি বলেন, সরকার সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। অর্থমন্ত্রক আমাদের (কী করতে হবে) নির্দেশ দিচ্ছে, আমরা শুধু সেই নির্দেশিকা পেশ করছি।


কিন্তু, কেন এই হাল হল? ওই কর্তার যুক্তি, সরকার পুরনো নোট দিয়ে নতুন নোট বদল করার ওপর বেশি জোর দিয়েছে। আর তা করতে গিয়ে, লেনদেনের গুরুত্ব উপেক্ষা করেছে। যার জেরেই এই বিপত্তি!


তিনি বলেন, নতুন ৫০০ নোট ছাপা শুরু হওয়ার অনেক আগে ২০০০ টাকার নোট ছাপার কাজ শুরু হয়েছে। ফলে, তা বাজারে আগে চলে এসেছে। অন্যদিকে, থমকে গিয়েছে ৫০০ টাকা।


রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান বলছে, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের আগে পর্যন্ত সারা দেশে ৯,০২৬.৬ কোটি নোটের পিস বাজারে চালু ছিল। এর মধ্যে আনুমানিক ২৪ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ২১০০ কোটি পিস নোট ৫০০ ও ১০০০ টাকার ছিল।


প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের হিসেব অনুযায়ী, এই ২১০০ কোটির মধ্যে একটি ছিল ১৫৭০ কোটি পিস, অপরটি ৫৩০ কোটি পিস।


সাধারণত, দেশের সব টাঁকশাল মিলিয়ে মাসে গড়ে ৩০০ কোটি পিস ছাপার ক্ষমতা রয়েছে। অর্থাৎ, সেই অনুযায়ী ২১০০ কোটি নতুন নোট ছাপতে সাত মাস লময় লাগার কথা।


কেন্দ্রীয় সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকার সেই সময় দিতে নারাজ ছিল। তাই ২০০০ টাকার নোট ছাপার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যাতে যত সম্ভব কম সময়ে পুরনো নোট বদল করা সম্ভব হয়।


কিন্তু, তা করতে গিয়ে কেন্দ্র এটা ভুলে যায় যে, ৫০০ টাকার নোটের অবর্তমানে এই ২০০০ টাকার নোটকে ভাঙাতে সমস্যায় পড়বেন সাধারণ মানুষ।


কারণ, ছোট ব্যবসায়ীদের কাছে এত সংখ্যক ১০০ টাকার নোট এবং নতুন ৫০০ টাকার নোট নেই। ফলত, দোকানে, বাজারে ২০০০ টাকার নোট নিয়ে হয়রান হতে হয় জনসাধারণকে।


আরবিআই-এর ওই কর্তা আরও জানান, দ্বিতীয় সমস্যা হয়েছে ছেপে যাওয়া নতুন ৫০০ টাকার নোটকে স্থানান্তর করা। তিনি জানান, টাঁকশাল থেকে কারেন্সি চেস্ট—সেখান থেকে ব্যাঙ্কের শাখা ও সর্বোপরি এটিএম—এই গোটা প্রক্রিয়াটা সময় সাপেক্ষের বিষয়। ফলে, যা হওয়ার তাই হয়েছে!