নয়াদিল্লি: ফি বৃদ্ধি ও নয়া হস্টেল নীতির পোশাক বিধি ও কার্ফু টাইমিংয়ের প্রতিবাদে আন্দোলনে উত্তাল জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। ক্যাম্পাসের বাইরে বড়সড় মিছিল করেন তাঁরা। ‘বিপুল পরিমাণ ফি বৃদ্ধি’র প্রতিবাদে ব্যানার নিয়ে ফ্রিডম স্কোয়ার থেকে এআইসিটিই অডিটোরিয়াম পর্যন্ত মিছিলে নামেন তাঁরা। আন্দোলনকারী এক পড়ুয়া বলেছেন, আমরা গত ১৫ দিন ধরে প্রতিবাদ করছি।কিন্তু উপাচার্য আমাদের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী নন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ফি বেড়েছে। এখানকার ৪০ শতাংশ পড়ুয়াই দরিদ্র পরিবারের।
আর এক পড়ুয়া বলেছেন, দরিদ্র ছাত্ররা যাতে পড়াশোনা করতে পারে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তুকি দেয়। হস্টেল ফি যদি ৬-৭ হাজার টাকা হয়, তাহলে দরিদ্র ছাত্ররা পড়াশোনা করবেন কীভাবে।
জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবরের বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হস্টেলে সিঙ্গল সিটার রুমের ভাড়া মাসে ২০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা ও ডাবল সিটার রুমের ভাড়া মাসে ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়াও হস্টেল মেসের এককালীন ফেরতযোগ্য সিকিউরিটি ডিপোজিট ৫,৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২,০০০ টাকা এবং সার্ভিস চার্জ বাড়িয়ে প্রতি মাসে  ১ হাজার ৭০০ টাকা থেকে বেড়ে  ৫ হাজার ৫০০ টাকা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
কর্তৃপক্ষের এই ছাত্র-বিরোধী নীতির প্রতিবাদে পড়ুয়রা এআইসিটিই অডিটোরিয়াম পর্যন্ত মিছিল বের করে। এখানেই অডিটোরিয়ামে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে বক্তব্য রাখছিলেন উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু।
সকাল থেকে শুরু হওয়া পড়ুয়াদের বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে জেএনইউ থেকে ৩ কিমি দূরে এআইসিটিই-র গেট বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং চত্বরের বাইরে মোতায়েন করা হয় নিরাপত্তা বাহিনী। সাড়ে এগারোটা নাগাদ পড়ুয়ারা সেখানে পৌঁছে যান।


পদস্থ আধিকারিকরা জানিয়েছেন, আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা ব্যারিকেড ভেঙে অডিটোরিয়ামের দিকে এগোতে থাকেন। কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়।
পড়ুয়ারা ডফলি বাজিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড। সেখানে উপাচার্য এম জগদেশ কুমারের বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক মন্তব্য লেখা ছিল। এছাড়াও ‘দিল্লি পুলিশ গো ব্যাক’ স্লোগানও ওঠে।
বিক্ষোভের জেরে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল অডিটোরিয়ামে আটকে পড়েন। পুলিশ আন্দোলনকারীদের তাঁর পথ করে দেওযার অনুরোধ জানান।
এক আধিকারিক বলেছেন, মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রীর যাওয়ার পথ করে দেওয়ার জন্য পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলতে বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনের সভাপতি ঐশী ঘোষ ও সহ সভাপতি সাকেত মুনকে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের গেট থেকে সরে যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাঁরা ওই আর্জি মানতে অস্বীকার করেন।
উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করার জন্য পুলিশ ছাত্র সংসদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে।
পড়ুয়ারা উপচার্যের সঙ্গে কথা বলতে চান এবং খসড়া হস্টেল নীতি প্রত্যাহারের দাবি জানান। তাঁদের অভিযোগ, ওই খসড়াতে রয়েছে ফি বৃদ্ধি, পোশাক বিধি ও কার্ফু টাইমিং।
হস্টেল নীতির পাশাপাশি পড়ুয়ারা সংসদের অফিস বন্ধ করার চেষ্টারও প্রতিবাদ করছেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
খসড়া হস্টেল নীতির প্রতিবাদে ছাত্র সংসদ ধর্মঘটে নেমেছে। ওই নীতি ইন্টার-হল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে অনুমোদিত হয়েছে। হস্টেল নীতি প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন।

অনুষ্ঠান থেকে উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কইয়া নাইডু বেরোতে পারলেও প্রায় ৬ ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে থাকেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল।  পরে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়,বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী। তাঁদের দাবি উপযুক্ত জায়গায় জানানোর আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

ব্যারিকেড ভেঙে ঢুকে পড়া। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পৌঁছে যাওয়া এবং শেষ পর্যন্ত মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্‍। এই পর্বকে জয় হিসেবেই দেখছেন জেএনইউ-র পড়ুয়ারা।

পাশাপাশি তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছেন ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন জারি থাকবে।