পটনা: প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার রেজাল্ট বলছে, তিনি ৭০-এ ৬৫ পেয়েছেন। অথচ দেখা যাচ্ছে, সঙ্গীতে টপার হয়েও গানের অ আ ক খ-ও জানেন না গিরিডির গণেশ কুমার। বিহার স্কুল এক্সামিনেশন বোর্ড বা বিএসইবি-র পরীক্ষার ফলে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার এমনই দৈন্যদশা ফুটে উঠেছে।

গত বছরও এমনই কেলেঙ্কারি হয়েছিল বিএসইবি-র পরীক্ষায়। আর্টসে টপার রুবি রাই নিজের বিষয় পলিটিক্যাল সায়েন্সকে সম্বোধন করে প্রডিকাল সায়েন্স বলে, তাতে নাকি আবার রান্না শেখায়। তদন্তে বার হয়, পরীক্ষার ফল নিয়ে তুমুল দুর্নীতি হয়েছে, স্কুল প্রশিক্ষক মণ্ডলী, বিএসইবি আধিকারিকরা এর সঙ্গে যুক্ত, আছে শিক্ষা সংক্রান্ত মাফিয়াকুলও। দেখা যায়, টাকার বিনিময়ে মেধা তালিকার এক নম্বর স্থান বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে অযোগ্যের হাতে।

এবারেও গণেশ কুমার জানাচ্ছেন, যেটুকু যা উত্তর তাঁর জানা ছিল, তিনি লিখে এসেছেন, যেগুলো পারেননি বানিয়ে বানিয়ে লিখেছেন। কিন্তু প্রথম হবেন ভাবেননি। গণেশের অবশ্য দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় বসার বয়স অনেকদিন আগে পেরিয়েছে, তাঁর বয়স ২৪। আর্টসে ৫.৩৩ লাখ ছাত্রছাত্রীকে পিছনে ফেলে ৫০০-র মধ্যে ৪১৩ নম্বর পেয়েছেন তিনি। গত পরশু ফল বার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি গা ঢাকা দেওয়ায় কেলেঙ্কারির গন্ধ পান সকলে। অবশেষে আজ গণেশ রেজাল্ট নিতে আসেন তাঁর স্কুল, সমস্তিপুরের আরএনএসজিএন উৎক্রমিৎ মধ্য বিদ্যালয়ে। হিন্দিতে তিনি পেয়েছেন ৯২, সঙ্গীতে থিওরিতে ৩০-এ ১৮ আর প্র্যাকটিক্যালে ৭০-এ ৬৫।

গণেশকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, সুর আর তাল কী। তাঁর জবাব, গানে যে লম্বা রাগ টানা হয় তার নাম সুর আর তাল দিয়ে যে গান করি সেটাই তাল। সঙ্গীতে ক’প্রকার তাল আছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, তিনটে, মধ্যম তাল আর সুর তাল। তাঁর বিশ্বাস, ভৈরবী রাগ গাওয়া হয় রাতে, বিখ্যাত কয়েকটি সঙ্গীত ঘরানা হল ‘পণ্ডিত রবিশঙ্করজি আর হরি চৌরাসিয়া’। প্র্যাকটিক্যালে কোন গানটা গেয়েছিলেন? জানতে চাইলে চরম বেসুরো কণ্ঠে তিনি শুনিয়ে দেন ফিল্মি গান, ইয়াদ আ রহি হ্যায়।

গণেশের স্কুল সরকারি স্বীকৃতি পেয়েছে মোটে ২০১৩-য়। স্কুলের প্রিন্সিপালও স্বীকার করে নিচ্ছেন, তাঁর ছাত্রছাত্রীদেরই কেউ যে বোর্ডের পরীক্ষায় প্রথম হবে তা তিনি ভাবেননি। তবে তাঁর মন্তব্য, কারও মধ্যে প্রতিভা তো থাকতেই পারে! বিহারের শিক্ষামন্ত্রীও দাঁড়িয়েছেন গণেশের পাশে। তাঁর জিজ্ঞাসা, যে সাংবাদিকরা গণেশকে এত প্রশ্ন করেছেন, তাঁরা কতটা জানেন সঙ্গীত নিয়ে?