নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বেতার অনুষ্ঠান ‘মন কি বাত’ জীবন বদলে দিয়েছে ওড়িশার কটকের এক চা বিক্রেতার। অবশ্য শুধু চা-বিক্রেতা বললে আসল পরিচয় দেওয়া হয় না। এই ব্যক্তি নিজের খরচে স্কুল তৈরি করে গরিব বাচ্চাদের পড়াশোনা শেখান। এছাড়া নিয়মিত হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের দেখাশোনাও করেন। এখনও পর্যন্ত ২১৭ বার রক্তও দিয়েছেন তিনি। তবে তা সত্ত্বেও এতদিন তাঁকে কেউই সেভাবে গুরুত্ব দিতেন না। কিন্তু এখন অনেকেই এসে তাঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করছেন।

৬০ বছর বয়সি এই ব্যক্তির নাম ডি প্রকাশ রাও। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমি আর্থিক সমস্যার কারণে পড়াশোনা করতে পারিনি। ৬ বছর বয়স থেকে চা বিক্রি করছি। পরবর্তীকালে একটি বস্তির শিশুদের পড়াশোনা শেখানো শুরু করি। আমি চাই এই শিশুরা যেন আর্থিক সমস্যার কারণে শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে না পড়ে। তাই স্কুল, চায়ের দোকান ও হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের দেখার জন্য নির্দিষ্ট সময় ভাগ করে নিয়েছি। এখন আমার স্কুলে ৭০ থেকে ৭৫ জন ছাত্র-ছাত্রী আছে। ওদের নিয়ে বাবা-মা বিশেষ কিছুই ভাবে না। বাচ্চারা শুরুতে স্কুলে আসতে চাইত না। তবে খাবার দেওয়া শুরু হতেই ওরা আসছে। এখন এই বাচ্চারা বাড়িতে বসে থাকা বা রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোর বদলে স্কুলে আসতে চায়। আমি অফ সিজনে রোজ ৬০০ টাকা আর সিজনে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা উপার্জন করি। তাই আমার আর্থিক সমস্যা নেই। আমি শুধু চাই এই শিশুরা ভবিষ্যতে কিছু একটা হয়ে উঠুক।’

প্রকাশ আরও জানিয়েছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন ওড়িশায় আসেন, আমি তাঁর দফতর থেকে ফোন পাই। বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যেতে হবে। আমি ১৫-২০ জন বাচ্চাকে নিয়ে সেখানে যাই। তিনি আমাকে দেখেই হাত নেড়ে বলেন, রাও সাহিব, আমি আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। আমি আপনার কথা জানি। কাউকে আপনার বিষয়ে কিছু বলতে হবে না। মোদীজি আমাকে তাঁর পাশে বসতে বলেন। তিনি আমাদের সঙ্গে ১৮ মিনিট কাটান। কাকতালীয়ভাবে ২৬ মে মোদীজি আমাদের সঙ্গে দেখা করেন এবং পরের দিনই মন কি বাতে তিনি আমার এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন। মন কি বাত অনুষ্ঠানের পর লোকজন আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করা শুরু করেছে।’

২৭ তারিখ ‘মন কি বাত’-এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আশা আশ্বাসন নামে একটি স্কুল খুলেছেন রাও। বস্তিতে বাস করা শিশুদের জন্য রোজগারের ৫০ শতাংশ টাকা খরচ করেন তিনি। তাঁর স্কুলে আসা সব শিশুর জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খাবারের ব্যবস্থা করেন। এই ব্যক্তি গত পাঁচ দশক ধরে চা বিক্রি করছেন। তিনি আমাদের কাছে, আমাদের সমাজের কাছে এবং গোটা দেশের কাছে অনুপ্রেরণা।’ প্রধানমন্ত্রীর এই অনুষ্ঠানই প্রকাশকে বিখ্যাত করে তুলেছে।