পটনা: স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘পকড়ুয়া বিবাহ্’। নাম শুনে সহজেই অনুমেয় যে, কথার মানে জোর করে বিয়ে দেওয়া। এমনই প্রথা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে বিহারে। বিশেষকরে প্রত্যন্ত গ্রাম-গ্রামাঞ্চলে। তবে, মজার কথা হল, এক্ষেত্রে নিশানায় বিবাহ-যোগ্য যুবকরা।


বিহার পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর গোটা রাজ্যে ৩,৪০৫ যুবককে অপহরণ করে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয় একেবারে অপরিচিত যুবতীদের সঙ্গে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘পকড়ুয়া বিবাহ্’ সম্পন্ন হয় গান-পয়েন্টে। অর্থাৎ, বরের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে, তাঁর ও পরিবারের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বাধ্য করা হয় বিয়ে করতে।


পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক জানান, গতমাসে এক ইঞ্জিনিয়ারকে এভাবেই ‘পকড়ুয়া বিবাহ্’ দেওয়া হয়। এই ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে জোর শোরগোল পড়ে যায়। ওই যুবকের অভিযোগ, তাঁকে অপহরণ করে বলপূর্বক বিয়ে দেওয়া হয়েছে। সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর সঙ্গে ঘর করতে রাজি নন বলেও জানিয়ে দেন তিনি।


বিহার পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ৩,০৭০ জন যুবককে এভাবে অপহরণ করে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ২০১৫ সালে সংখ্যাটি ছিল ৩,০০০ এবং ২০১৪ সালে ২,৫২৬ জন। প্রতিক্ষেত্রেই হয় ওই যুবকদের বা তাঁদের পরিবারের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে এই বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়েছে বলে জানান আধিকারিকরা।


পুলিশ জানিয়েছে, পরিসংখ্যান ধরলে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৯টি ‘পকড়ুয়া বিবাহ্’-র ঘটনা ঘটছে বিহারে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে পুলিশ। প্রত্যেক জেলার পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আসন্ন বিয়ের মরশুমে এধরনের ঘটনা বাড়তে পারে। ফলে, সতর্ক থাকতে, যাতে ‘পকড়ুয়া বিবাহ্’-র ঘটনা রোখা যায়।


উত্তর বিহারের বন্যাপ্রবণ কোশি অঞ্চলে কাজ করা সমাজসেবক মহেন্দর যাদব জানান, এই প্রথা অস্বাভাবিক নয়। দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। তবে, সম্প্রতি সংখ্যা বৃদ্ধি হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। তাঁর দাবি, পণপ্রথার জন্যই এই সামাজিক সমস্যা তৈরি হয়েছে। তিনি জানান, বহুক্ষেত্রে কনের পরিবার পেশাদার অপরাধীদের ভাড়া করে যুবক ও তাঁর পরিবারকে হুমকি দিয়ে বিয়েতে বাধ্য করায়।