নয়াদিল্লি: চিন সহ কয়েকটি দেশের লাগাতার বিরোধিতার জেরে নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপে (এনএসজি)-র সদস্যপদ না পেলেও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির রপ্তানি নিয়ন্ত্রণকারী দেশগুলির ক্লাবে ঢুকে গেল ভারত। মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিম (এমটিসিআর) –এ পূর্ণ ক্ষমতাসম্পন্ন শরিক হিসাবে সোমবার পা রাখল ভারত। এই বহু পাক্ষিক রপ্তানি নিয়ন্ত্র্রণকারী মঞ্চে অন্তর্ভুক্ত হতে আনুষ্ঠানিকভাবে ফ্রান্সের রাষ্টদূত-আলেকজান্দ্রে জিয়েগলার, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত অ্যালফনসাস স্টোয়েলিঙ্গা, লুক্সেমবার্গের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের সামনে প্রয়োজনীয় নথিপত্রে (ইনস্ট্রুমেন্ট অব অ্যাকসেশন) আজ স্বাক্ষর করেন বিদেশ সচিব এস জয়শঙ্কর।


 

ঘটনাচক্রে যে চিন পাকিস্তানের হয়ে আসরে নেমে ভারতের এনএসজি-তে ঢোকায় বাগড়া দিয়েছে, শেষ পর্যন্ত ভারতের প্রয়াস সফল হতে দেয়নি, তারা কিন্তু এখনও এমটিসিআরে প্রবেশ করতে পারেনি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে, চিনকে নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে দিল ভারত, এমনটা বলা যেতেই পারে। প্রভাবশালী এনএসজি-তে সামিল হতে না পেরে চিনকে একহাত নেয় ভারত। বিদেশ দফতরের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বলেন, চিনের সঙ্গে এ নিয়ে আমরা কথা চালিয়ে যাব। চিনের সঙ্গে আমাদের আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ দিক হবে এটি। আমরা ওদের বারংবার এটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেব যে, পরস্পরের স্বার্থ, অগ্রাধিকার, উদ্বেগ উপলব্ধি করার মধ্য দিয়েই সম্পর্ক এগিয়ে চলে।

 

আজকের অন্তর্ভুক্তির ফলে ভারত এমটিসিআর-এর ৩৫-তম সদস্য হল। ক্ষেপণাস্ত্র ও তার ব্যবহারের কলাকৌশলের (ডেলিভারি সিস্টেম) বেলাগাম প্রসার রোধ করাই লক্ষ্য এই প্রভাবশালী সংস্থার। তাতে ভারতের অন্তর্ভুক্তিকে সমর্থন করায় এদিন বাকি ৩৪টি দেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বিদেশমন্ত্রক। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, আজ সকালে এমটিসিআরে যোগ দিল ভারত। এই ব্যবস্থায় ভারত ৩৫-তম সদস্য হওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রসার ঠেকানোর কাজে পরস্পরের সুবিধা হবে।

১৯৯৮ সালে পরীক্ষামূলক পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে শোরগোল ফেলে দিয়েছিল ভারত। বলা হচ্ছে, এখন এমটিসিআরের সদস্য হওয়ার ফলে ভারতের নিজের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বৈধতা পাওয়ার পথে এগিয়ে যাবে।

 

ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট সিস্টেম, মানবহীন আকাশ যান বা ড্রোন, অন্তত ৩০০ কিমি দূরত্ব পর্যন্ত ৫০০ কেজি ওজনের অস্ত্র বহনের ক্ষমতাসম্পন্ন টেকনোলজির পাশাপাশি গণবিধ্বংসী অস্ত্রশস্ত্রের সরবরাহ ঠেকানোর উদ্দেশ্যেই তৈরি হয়েছে এমটিসিআর। ২০০৮ সালে আমেরিকার সঙ্গে ঐতিহাসিক অসামরিক পরমাণু চুক্তি করে ভারত। এর ফলে পরমাণু অস্ত্র তৈরির মালমশলা, প্রযুক্তির দরজা কিছুটা খোলে ভারতের সামনে। তারপর থেকে প্রচলিত, পরমাণু, জৈব ও রাসায়নিক অস্ত্রশস্ত্র সংক্রান্ত পরমাণু মালমশলা ও প্রযুক্তির রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করে, এমন বিভিন্ন এলিট গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ার জন্য চেষ্টা শুরু করে ভারত।