নয়াদিল্লি: এবার আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় ভারত পৌঁছে দিতে চলেছে ব্রাহ্মোস, আকাশ ক্ষেপণাস্ত্রদের। জানা গেছে, ফিলিপিনস, ইন্দোনেশিয়ার মত বেশ কয়েকটি দেশ ব্রাহ্মোস কেনার ব্যাপারে আগ্রহপ্রকাশ করেছে। অতি উচ্চ পর্যায়ের এই ক্ষেপণাস্ত্র ভিয়েতনামকে বিক্রি করতে পদক্ষেপ করেছে নয়াদিল্লি, আরও ১৫টি আন্তর্জাতিক বাজারে নজর রেখেছে তারা।
শব্দের থেকে দ্রুতগামী ব্রাহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ২৯০ কিলোমিটার, জল, স্থল যে কোনও জায়গা থেকেই এই ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া সম্ভব, এমনকী সাবমেরিন থেকেও। রুশ- ভারত যৌথ উদ্যোগে তৈরি এই ব্রাহ্মোস বিভিন্ন সহযোগী দেশের কাছে বিক্রি করলে সে সব দেশের প্রতিরক্ষা শক্তি যেমন বাড়বে, তেমনই কোটি কোটি টাকা আসবে ভারতীয় কোষাগারেও। যারা এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে, সেই ব্রাহ্মোস এরোস্পেসকে কেন্দ্রীয় সরকার পাঁচটি রাষ্ট্রকে ব্রাহ্মোস বিক্রির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দিয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই দেশগুলির মধ্যে সবথেকে আগে রয়েছে ভিয়েতনাম, দক্ষিণ চিন সাগর নিয়ে যার সঙ্গে চিনের শত্রুতা সর্বজনবিদিত। তারপর রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, চিলি ও ব্রাজিল। এছাড়া তৈরি হয়েছে আরও ১১টি দেশের দ্বিতীয় একটি তালিকা, যারা ব্রাহ্মোস কিনতে আগ্রহী কিন্তু আরও আলোচনা প্রয়োজন। এই দেশগুলির মধ্যে রয়েছে ফিলিপিনস, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমীরশাহি। ২০১১ সালে ভিয়েতনাম ব্রাহ্মোস কেনার আগ্রহ দেখালেও চিনকে চটানোর ভয়ে তাতে কান দেয়নি ভারত। বেজিং মনে করে, শব্দের থেকে অন্তত ৩ গুণ দ্রুত চলা বিশ্বের সর্বাপেক্ষা দ্রুতগামী এই ক্রুজ মিসাইল তাদের পক্ষে বিপজ্জনক। নয়াদিল্লি এতদিন মনে করত, ওয়াশিংটন বা হ্যানয়ের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বোঝাপড়ায় গেলে বেজিং ক্ষুব্ধ হতে পারে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এসে এই চিন্তাভাবনা উল্টে দিয়েছে। তাদের ধারণা, আমেরিকা, জাপান ও ভিয়েতনামের মত দেশগুলির সঙ্গে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ালে চিনকে ঠেকাতে সুবিধে বই অসুবিধে হবে না। তা ছাড়া পরমাণু শক্তিক্ষেত্রেও ভারত আর আগের মত এক ঘরে নেই। ফলে ক্ষেপণাস্ত্র রফতানির পক্ষে এই সময়টাই আদর্শ বলে মনে করছে তারা। তা ছাড়া শিগগিরই মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিম বা এমটিসিআর-এ যোগ দেবে ভারত, এই সপ্তাহেই ওয়াশিংটনে এ ব্যাপারে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের কথা হয়েছে। ফলে নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপ বা এনএসজি-তে প্রবেশও নয়াদিল্লির পক্ষে সহজ হয়ে যাবে, যাতে চিনের প্রবল আপত্তি রয়েছে। এই দুই গ্রুপে অন্তর্ভুক্তি হলে পরমাণু প্রযুক্তি ও গবেষণা- দু’ক্ষেত্রেই অনেক সুবিধে পাবে ভারত।
বিশেষ করে ভিয়েতনামের সঙ্গে প্রতিরক্ষাগত সম্পর্ক উন্নতিতে চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না নয়াদিল্লি। হ্যানয়কে সমুদ্রে নজরদারি করার নৌকা সরবরাহ করছে তারা, সমুদ্রপথে দুদেশের সংযোগ বৃদ্ধির ব্যাপারেও কথাবার্তা চলছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পার্রিকর এ ব্যাপারে ভিয়েতনামের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক সেরেছেন। এ বছরের শেষে ভিয়েতনামকে ব্রাহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করে এই সম্পর্ক সুদৃঢ় হবে বলে আশা করছে নয়াদিল্লি। ব্রাহ্মোস সহ একটি যুদ্ধজাহাজ ভিয়েতনামকে বিক্রির প্রস্তাব বিবেচনা করছে তারা। এর ফলে দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের বিরুদ্ধে ভিয়েতনামের শক্তি অনেকটা বৃদ্ধি পাবে।